উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য়জিৎ বৈদ্য় : করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় একদিকে যেমন কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার না করার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা, তেমনই অভিযোগ উঠছে রেলে বছরের পর বছর ধরে কর্মী না নেওয়ার। গোটা দেশে রেল লাইন রয়েছে, ৬৭ হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি। ৭ হাজারের বেশি স্টেশন রয়েছে। তথ্য বলছে, গত ৫ বছরে ৮১৩টি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে গত কয়েক বছরে হু হু করে কমছে রেলের কর্মীসংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, বছর ২০ আগেও রেলের মোট স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২১ লক্ষ।
মোদি সরকারের আমলে, ২০২০ সালে রেলের মোট স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমে হয়, ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৮৬ জন। ২০২১ সালে তা আরও কমে হয়, ১২ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৪৭ জন। পরের, বছর তা কমে হয়, ১২ লক্ষ ১২ হাজার ৮৮২।
৩ ফেব্রুয়ারি, রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রেলের বিভিন্ন বিভাগে ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯টি পদ খালি রয়েছে। এর পাশাপাশি, রাজ্যসভায় দেওয়া রেলমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, UPSC-র মাধ্যমে ২০১৯ সালে রেলে যেখানে ৪১৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যাটা শূন্য। রাজ্যসভায় দেওয়া রেলমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে রেলে স্থায়ী নিয়োগ কমে গেলেও, বেড়েছে অস্থায়ী পদে নিয়োগ।
এই অবস্থায়, দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর গড়ে ৩৮ থেকে ৪২ হাজার রেলকর্মী অবসর নেন। অথচ গত ৫ বছরে রেলের সব বিভাগ মিলিয়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়েছে ৫০ হাজারের মতো। ২২ বগির একটা ট্রেন কারশে়ডে আসলে, রেলের রুল বুক অনুযায়ী, প্রতি কোচ পরীক্ষা করে দেখতে মোট ২২ জন কর্মী লাগে। পরীক্ষার জন্য ৬ ঘণ্টা সময় দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু বাস্তবে, ৫ থেকে ৬ জনকে এই কাজটা ওই সময়ের মধ্যে করতে হয়। পরীক্ষা করে দেখতে হয় ইলেকট্রিক্য়াল যন্ত্রাংশ, চাকা, ব্রেকিং সিস্টেম-সহ সবটাই। কোনও কোনও সময়, এর জন্য ৬ ঘণ্টাও কম সময় মেলে বলে অভিযোগ কর্মী সংগঠনের। পর্যাপ্ত লোক না থাকায়, এক জন কর্মীকে ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার রেল পথ পরীক্ষা করতে হয়।
রুল বুক অনুযায়ী, একজন লোকো পাইলটের ডিউটি টাইম ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা। শিয়ালদা থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪০টি সিগন্যাল রয়েছে। একজন, চালককে সবকটি সিগন্যালই দেখতে হয়। শতাব্দী-দূরন্ত বা রাজধানীর লোকো পাইলটদের গড়ে প্রতি ২০ থেকে ২২ সেকেন্ড অন্তর এক একটি সিগন্যাল দেখতে হয়। এই অবস্থায়, প্রয়োজনের তুলনায় চালকের সংখ্যা কম থাকায়, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশি কাজ করতে হয় বলে দাবি কর্মী সংগঠনের।
এর পাশাপাশি, উন্নতমানের প্রযুক্তি এলেও, তার ব্যবহারিক প্রযোগের ক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের অভাব দেখা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। রেল বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বেসরকারিকরণের ফলে, রেলের বহু কাজ বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে, দায় এবং দায়িত্ব অনেকটাই কমছে। সেই সঙ্গে কাজের মানও পড়ে যাচ্ছে।