নয়াদিল্লি: মা আছেন লে-তে। তার মাত্র ৩৫ দিনের সন্তানের দিল্লির হাসপাতালে জটিল অপারেশনের পর চিকিত্সা চলছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাক্সে ভরে সন্তানের জন্য বুকের দুধ পাঠাচ্ছেন মা। তা লে থেকে পৌঁছে যাচ্ছে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে হাসপাতালে।


৩০ বছরের দোরজে পালমো ১৬ জুন পুত্রসন্তান জন্মানোর পরই দেখেন সে দুধ নিতে পারছে না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি দিল্লির শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামত নেন। দেখা যায়, সদ্যোজাতের খাদ্যনালী ও ট্র্য়াচিয়া (শ্বাসনালী) একসঙ্গে লেগে আছে। জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হবে। ১৮ জুন বাচ্চাটিকে দিল্লি নিয়ে আসেন তার কাকা। কর্নাটকের মহীশূরে শিক্ষক পদে নিযুক্ত , বাচ্চাটির বাবা জিকমেত ওয়াঙডুও রাজধানী পৌঁছন। ১৯ জুন অস্ত্রোপচার হয়। বাচ্চাটির জটিল অসুখ ধরা পড়ে। এসব ক্ষেত্রে জন্মের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার দরকার হয়।

ডাক্তারদের পরামর্শে বাচ্চাটির পরিবার লে থেকে দিল্লিতে ৬০ মিলিলিটার দুধের ৬টি বোতল নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করে। জিকমেত বলেন, ওকে পাউডার দুধ দেওয়া হয়। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। ডাক্তাররা আমাদের বলেন, মায়ের দুধের বন্দোবস্ত যদি করা যায়। একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু আমার সৌভাগ্য যে, লাদাখ বিমানবন্দরে কাজ করেন, এমন কয়েকজন বন্ধুবান্ধব দুধ পাঠানোয় সাহায্য করেন। দিনকয়েক বাদে বিমান সংস্থাই এগিয়ে এসে বিনা ভাড়ায় দুধ দিল্লি পৌঁছনোর দায়িত্ব নেয়। দিল্লির শালিমার বাগের এক নামী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শিশু বিভাগের মুখ্য় পরামর্শদাতা ডঃ হর্ষবর্ধন বলেন, থার্মোকল, রেক্সিনে বিশেষ ভাবে তৈরি কন্টেনারে ওই খাবার আসে। বাচ্চাটা মায়ের দুধ পানের পর খালি বোতল বিমানে লে-তে পাঠানো হয়। সেখানে মা আবার তাতে দুধ ভরে আমাদের পাঠান।

বাচ্চাটি সার্জারির ধাক্কা সামলে মায়ের বুকের দুধের জোরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে। কয়েকদিন পরই লাদাখের বাড়িতে ফিরবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় বাচ্চাটিকে মায়ের দুধ পাঠানোয় জড়িত সবার খুব প্রশংসা হচ্ছে। একজন লিখেছেন, গোটা মানবসমাজের এমন একটা কাজে এককাট্টা হওয়া আশার আলো দেখায়, ভরসা তৈরি হয়। বাচ্চাটার জন্য এমন সহায়তার শৃঙখল তৈরি করায় সব্বাইকে সম্মান জানাই। আরেকজন লিখেছেন, মা তো শেষ পর্যন্ত মা-ই। একেবারে নিখাদ, নির্ভেজাল স্নেহ-ভালবাসার উত্স। সবসময়।