পল্লবী দে, কলকাতা: "I am an Albenian by chance but an Indian by choice"- লক্ষ্য ছিল ভারতের আর্ত মানুষের সেবা করা, ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন অষ্টাদশী তরুণী। আপন জীবনদর্শন দিয়ে বোঝালেন স্বামীজির সেই বিখ্যাত উক্তি- 'জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'। নিজেকে সমর্পণ করলেন আর্তের সেবায়। সেবাধর্ম দিয়ে আজন্ম উচ্চ-নীচ সকলকে আপন করে নিয়েছিলেন মাদার টেরেসা। (Mother Teresa)


তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের একটি ছোট্ট গ্রাম স্কোপজ। সেখানেরই এক আলবেনিয় রোমান ক্যাথলিক (Roman Catholic) কৃষক পরিবারে জন্ম অ্যাগনেসের। অল্পবয়স থেকেই সন্ন্যাসিনীদের জীবন-কাহিনি টানত ছোট্ট অ্যাগনেসকে। তাই ১২ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর্তের সেবাতেই জীবন অর্পণ করবেন তিনি। যোগ দেন আয়ারল্যান্ডের লরেটো সন্ন্যাসিনীদের সংস্থায়। এরপর ১৯২৯ সালে ভারতের মাটিতে পা রাখেন। কলকাতার এন্টালিতে লরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানো শুরু করেন। পড়ানোর ফাঁকেই আর্তদের সেবা চালিয়ে যেতে থাকেন সিস্টার অ্যাগনেস।


এদিকে কলকাতায় (Kolkata) তখন দুর্ভিক্ষ চলছে। ১৯৪৩-এর সেই সময় ক্ষুধার্ত শহরের কঙ্কাল দেখেছিলেন 'সিস্টার টেরেসা'। (Sister Teresa) এরপর ১৯৮৬-এ তিলোত্তমা ক্ষতবিক্ষত হয়ে ওঠে দাঙ্গায়। শহরের সেই চিত্রর মাঝে অভাগা অনাথ অসহায় শিশুদের মুখই বারবার টেরেসার অন্তরে যেন ফুটে উঠত। এদিকে সমাজে তখন ছড়িয়ে কুষ্ঠ রোগ। সে রোগীর ঠাঁই হত না কোথাও। কিন্তু পরম স্নেহে তাঁদেরই কোলে তুলে নিলেন অ্যাগনেস।  


পরনে নীল পাড় সাদা সুতির শাড়ি, বাম কাঁধে পবিত্র ক্রুশ। কলকাতার বস্তিতেই তাঁর সেবাযজ্ঞে প্রথম আহুতি শুরু। তবে ১৯৫০ সালে তৈরি করেছিলেন আর্তমানুষের আপনস্থল মিশনারিজ অফ চ্যারিটি। কিন্তু এই 'ছোঁয়াচ' রোগীকেই আপন করে নিলেন কেন? মাদার সেই সময় জানিয়েছিলেন- 'আমি যখন কুষ্ঠ রোগীর সেবা করি তখন ভাবি আমি ভগবানের সেবা করছি'। এরপর বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় শরণার্থীদের মা হয়ে উঠলেন তিনি। 'সিস্টার অ্যাগনেস' থেকে তিনি হয়ে উঠলেন 'মাদার টেরেসা'। 


তাঁর কথায়, “ … a call within a call …… The message was clear. I was to leave the convent and help the poor, while living among them”. মাদার টেরেসার কথায়, 'গরিবের সেবা করতে হলে গরিব হয়ে তাদের মধ্যে থেকেই তা করতে হবে।' তিলে তিলে গড়ে তুলতে লাগলেন তাঁর সেবা প্রতিষ্ঠান। দুঃখী দুঃস্থ আর্ত জর্জরিত মানুষকে তিনি একান্ত মায়ের স্নেহ – মমতায় বুকে তুলে নিলেন। 


পদ্মশ্রী, ভারতরত্ন, ম্যাগসেসে, পোপ জন শান্তি পুরস্কার, গুডসামারিটান, জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে নোবেল প্রাইজ, গণদেবতার সেবায় যে অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাদার, গোটা বিশ্ব তা স্বীকার করেছে আনত মস্তকে। প্রয়াত মাদারকে ২০১৬-এ “সন্ত” উপাধিতে ভূষিত করেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ ফ্রান্সিস ।



মাদার- আজও সেই আলোর পথযাত্রী, যে পথ মানবপ্রেমের আদর্শর পথ। যে পথের ঈশ্বর হল সেই সকল দিনার্ত মানুষরা।