নয়াদিল্লি: খোলা আকাশের নীচে হাওয়ায় উড়ছে তেরঙ্গা। সমবেত কণ্ঠে 'সারে জহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হমারা' গেয়ে চলেছেন কচিকাঁচা থেকে ছেলে-বুড়োরা (Saare Jahan Se Achha)। স্বাধীনতা দিবেৃস হোক বা প্রজাতন্ত্র দিবসে, এই দৃশ্য দেখেই ছোট থেকে অভ্যস্ত আমরা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত মুখে মুখে ফেরে এই গান। কানে গেলে মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসায় উদ্বেল হয়ে ওঠে মন। কিন্তু সেই গানের রচয়িতা, বিখ্যাত কবি মহম্মদ ইকবালকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস হল (Muhammad Allama Iqbal)।


দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Delhi University) শিক্ষা পর্ষদের তরফে শুক্রবার এই প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই থেকে মহম্মদ ইকবালকে সম্পর্কিত অধ্যায়টি বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সকলে। সংবাদমাধ্য়মে বিষয়টি সুনিশ্চিতও করা হয়েছে। 


দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকস্তরে কলা বিভাগের ষষ্ঠ সেমেস্টারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে 'মডার্ন ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল থট' নামের অধ্যায়ে মহম্মদ ইকবালের উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে 'ইকবাল: কমিউনিটি' শীর্ষক বিভাগে স্বাধীন চিন্তাভাবনার মনীষীদের কথা বলা রয়েছে। মহম্মদ ইকবালের পাশাপাশি রাজা রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গাঁধী, পণ্ডিতা রামারাও, ভীমরাও অম্বেডকরের উল্লেখও রয়েছে বইয়ে। 


আরও পড়ুন: NITI Aayog: পথ দেখালেন মমতাই, একজোট বিরোধীরা, নীতি আয়োগ বৈঠক বয়কট আরও ৬ অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর


মোট ১১টি বিভাগের মধ্যে মহম্মদ ইকবালকে নিয়ে থাকা অধ্যায়টি দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের কাছে ওই প্রস্তাবটি তোলা হবে। সেখানেই গৃহীত হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ষদের এক সদস্য বলেন, "রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে বদল আনার প্রস্তাব আনা হয়েছে। ইকবালকে নিয়ে একটি অধ্যায় বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।"


বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি-র অভিভাবক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। তাদের দাবি, ইকবাল আসলে 'ধর্মান্ধ' ছিলেন। দেশভাগের জন্য় দায়ী ছিলেন তিনি। তাদের কথায়, 'মহম্মদ ইকবালকে পাক দর্শনের জনক বলা হয়। মুসলিম লিগের নেতা হিসেবে মহম্মদ আলি জিন্নাকে তুলে এনেছিলেন তিনিই। জিন্না দেশভাগের জন্য যতটা দায়ী, ইকবালও ততটাই'।


১৮৭৭ সালে, তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের সিয়ালকোটে জন্ম মহম্মদ ইকবালের। আল্লামা ইকবাল নামেও পরিচিত তিনি। পাকিস্তানে জাতীয় কবি হিসেবে সমাদৃত। তাঁর কলম থেকেই বেরিয়েছিল 'সারে জহাঁ সে আচ্ছা' গানটি। ভারতে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থেকে পৃথক পাকিস্তান গঠনের ভাবনাও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে দাবি করেন অনেকে। এতে দু'পক্ষই শান্তিতে বাস করতে পারবেন বলে মনে করতেন তিনি। যদিও শেষ দুই পৃথক দেশের তত্ত্ব নিয়ে আক্ষেপও ধরা পড়ে তাঁর লেখায়। দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তরফে দীর্ঘদিন ধরেই পাঠ্যক্রম থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠছিল।