ভোপাল: ঠোঁটে ঝুলছে জ্বলন্ত সিগারেট। শরীর ভঙ্গিতে ফুটে উঠছে ঔদ্ধত্য। সামনে মাটিতে বসে থাকা মানুষটির প্রতি তাচ্ছিল্যের নজর। সেটুকুতেও থেমে গেলে হতো। কিন্তু জনজাতি বলেই হয়ত মানুষটিকে সমাজে তাঁর জায়গা বোঝানোর লোভ সামলাতে পারলেন না। তাই দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর মুখে প্রস্রাব করতে দেখা গেল মধ্যপ্রদেশের এক যুবককে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সেই দৃশ্য। অভিযুক্ত ওই যুবক মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ শুক্লের সহযোগী বলে জানা গিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিজেপি যদিও অভিযুক্তকে নিজেদের কর্মী বলে মানতে নারাজ (MP Viral Video)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ওই ভিডিও, যার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। কিন্তু ওই ভিডিও ঘিরে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। অভিযুক্ত ওই যুবককে প্রবেশ শুক্ল (Pravesh Shukla) বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তিনি মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র যুব মোর্চার সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচয় সামনে এসেছে। তা নিয়ে বিজেপি-কে তুলোধনা করেছেন বিরোধীরা। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব ওই যুবককে নিজেদের লোক বলে মানতে নারাজ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, রাস্তার পাশে কংক্রিটে বাঁধানো জায়গায় বলে রয়েছেন একজন। তাঁর পরনের জামাকাপড় শতচ্ছিন্ন। চেহারা উস্কোখুস্কো। তাঁর সামনে উদ্ধত আচরণে দাঁড়িয়ে প্রবেশ। চোখে চোখ রেখে মাটিতে বসে থাকা যুবকের মুখে একনাগাড়ে প্রস্রাব করে চলেছেন তিনি। কোনও রকমে ডাঁয়ে বাঁয়ে মুখ ঘুরিয়ে তা এড়ানোর চেষ্টা করছেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু তার মাথা, মুখ, কান, ঘাড়, বুক নির্বিকারে ভিজিয়ে চলেছেন প্রবেশ।
ভিডিও-টি সাামনে আসতেই বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তোলে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ জানান, প্রবেশ কেদারনাথ শুক্লার সহযোগী। যে যুবকের উপর প্রস্রাব করেন প্রবেশ, তিনি জনজাতি সম্প্রদায়ের। প্রবেশের একাধিক ছবিও পোস্ট করেন আব্বাস। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবিও পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ এবং রাজেন্দ্র শুক্লর সঙ্গে দেখা গিয়েছে প্রবেশকে। যদিও কেদারনাথের দাবি, তাঁর এলাকার ছেলে বলেই প্রবেশকে চেনেন, বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত নন অভিযুক্ত।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ। তাঁর বক্তব্য, 'সীধী জেলা থেকে জনজাতি যুবকের মুখে প্রস্রাব করার পাশপিক আচরণের একটি ভিডিও সামনে এসেছে। সভ্য সমাজে জনজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে এমন জঘন্য আচরণের কোনও জায়গা নেই'। এই ঘটনায় গোটা মধ্যপ্রদেশের মাথা লজ্জায় নত হয়ে গিয়েছে। অপরাধীকে কড়া শাস্তি দিতে হবে। মধ্যপ্রদেশে জনজাতিদের উপর এই ধরনের আচরণ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে অবিলম্বে'।
মঙ্গলবার প্রবেশের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ২৯৪ (অশ্লীল আচরণ), ৫০৪ (ইচ্ছাকৃত ভাবে শান্তিভঙ্গ এবং অবমাননা) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি তফসিলি জাাতি এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস আচরণ প্রতিরোধ আইনেও পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান প্রবেশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। ট্যুইটারে লেখেন, 'সীধি জেলার একটি ভিডিও সম্পর্কে জানতে পারলাম...অপরাধীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছি পুলিশকে। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছি'।
যাঁর উপর প্রবেশ প্রস্রাব করেন বলে অভিযোগ, সেই দাসমত রাওয়তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গোড়ায় ভিডিও-টিকে ভুয়ো বলে উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু চাপের মুখে তিনি সত্য প্রকাশ করতে পারছেন না বলে মনে হয় পুলিশের। তাই তাঁর হলফনামা এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।