ঢাকা: গণ অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অভিযোগ উঠতে শুরু করল। কারণ মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের স্মরণে পালিত জাতীয় ছুটিগুলি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে মুজিব হত্যার দিন ১৫ অগাস্টও। ওই দিনটি এযাবৎ জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হতো বাংলাদেশে। (Bangladesh National Holidays)


বুধবার মোট আটটি জাতীয় ছুটি বাতিলের কথা ঘোষণা করে ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। মূলত শেখ হাসিনার আমলেই সেগুলির ঘোষণা হয়। যে জাতীয় ছুটিগুলি বাতিল করেছে ইউনূস সরকার, সেগুলি হল-



  • ৭ মার্চ: ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ঘোষণা করেন মুজিব।

  • ১৭ মার্চ: মুজিবের জন্মবার্ষিকী।

  • ১৫ অগাস্ট: মুজিবের মৃত্যুবার্ষিকী, যা জাতীয় শোকদিবস।

  • ৪ নভেম্বর: সংবিধান দিবস। 


এর পাশাপাশি, ৫ অগাস্ট ভাইয়ের মৃত্যুদিবস, ৮ অগাস্ট মায়ের মৃত্যুদিবস, ১৮ অক্টোবর ছোট ভাইয়ের মৃত্যুদিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস পালনের যে সূচনা করেছিলেন হাসিনা, সেগুলিও বাতিল করা হয়েছে। শীঘ্রই এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানিয়েছে ইউনূস সরকার। 
জাতীয় ছুটি বাতিলের এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ। তাদের দাবি, স্বাধীন, সার্বভৌম বালাদেশের প্রতিষ্ঠা বাংলা তথা বাঙালির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।  তাতে জাতির জনক মুজিবের যে অবদান, তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। (Muhammad Yunus)


আওয়ামি লিগের বিবৃতিতে বলা হয়, 'বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহযোগী, দেশের স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অবদান এভাবে মুছে দেওয়া যায় না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীকগুলি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। এখন আবার সরকার জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত, জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কিত ছুটিগুলি বাতিল করছে। এই প্রতিহিংসার রাজনীতির তীব্র নিন্দা করছি আমরা'।


শুধু জাতীয় ছুটি বাতিলই নয়, বাংলাদেশের ইউনূস সরকার মুজিবকে জাতির জনক বলে মানতেও অস্বীকার করেছে। ইউনূস সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি, যার জেরে হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়। তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামি লিগের মুজিবকে নষ্ট করে ফেলেছে এবং যেভাবে তাঁর মূর্তিপুজো হয়েছে বাংলাদেশে, তা ফ্যাসিবাদী আদর্শের পরিচয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে বাংলাদেশে, সেখানে ফ্যাসিবাদী আদর্শের কোনও জায়গা নেই বলে জানান তিনি।


৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তি ঘোষণার দিনটিকে জাতীয় ছুটির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে নাহিদের বক্তব্য, "৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে বাদ দিচ্ছি না আমরা। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বও বাদ দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু নির্মোহ থেকে, নতুন করে ইতিহাস লেখা হবে, যেখানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।"


মুজিবকে জাতির জনক বলে যে তিনি মনে করেন না, তাও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন নাহিদ। তাঁর কথায়, "প্রত্যেক দেশে একজন জাতির জনক থাকেন। আমাদের থাকবে না। আমাদের দেশের ইতিহাসে শুধুমাত্র একজন নন, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস ১৯৫২ সাল থেকে শুরু হয়নি। লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইংরেজ বিরোধী লড়াই, ১৯৪৭ সালের লড়াই, ১৯৭১ সালের লড়াই, ১৯৯০ সালের লড়াই, ২০২৪ সালের লড়াই রয়েছে এই ভূখণ্ডের মানুষের। একে ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাবর্দি, আবুল হাশিম, যোগেন মণ্ডল, মৌলানা ভাসানি, অনেকের লড়াই রয়েছে এই মাটিতে। একজন নন, আমাদের অনেক জাতির জনক রয়েছেন, যাঁদের অবদানে আজ এই রাষ্ট্র, স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা। একটি দল বা এক ব্যক্তির মধ্যে সবকিছুকে সীমাবদ্ধ করতে চাই না আমরা।"


আওয়ামি লিগ যে দিনগুলিকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছিল, সেই 'অপ্রয়োজনীয়' দিvগুলিকেই বাতিল করা হয়েছে বলে জানান নাহিদ। প্রয়োজন বুঝে পরবর্তীতে আরও এমন পদক্ষেপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।