ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন নোবেলজয়ী মুহম্মদ ইউনূস। দীর্ঘ অস্থিরতার পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরেই প্যারিস থেকে ঢাকায় ফেরেন ইউনূস, রাতেই শপথবাক্য পাঠ করলেন। ইউনূস জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এবার এমন সরকার গঠিত হবে, যারা মানুষকে রক্ষা করবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কত বছর হবে, সেই নিয়ে ধন্দ রয়েছে। (Muhammad Yunus Oath Ceremony)


সোমবার সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তার পরেও যদিও অশান্তি থামেনি। আজও হিংসা, অশান্তির খবর উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সেই আবহেই ঢাকায় পৌঁছে হিংসার পথ থেকে সরে আসার বার্তা দেন ইউনূস। তাঁর উপর আস্থা রাখতে আর্জি জানান সকলকে। এর পর রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে এদিন শপথ নিলেন ইউনূস। রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। (Bangladesh Interim Government) শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে এদিন, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ এবং সাম্প্রতিক হিংসায় বলি হওয়া মানুষদের জন্য এদিন এক মিনিট নীরবতা পালনও করা হয়।


ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে, তাতে আমেরিকার সরকারের সমর্থন থাকবে বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের দিকে আমেরিকা সরকারের নজর রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই।


ইউনূসকে ইতিমধ্যেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'নতুন দায়িত্ব হাতে নেওয়া অধ্য়াপক মুহম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক, হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, এই কামনা করি। নাগরিকদের শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা'।


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ১৬ জন উপদেষ্টা থাকছেন। তাঁরা হলেন, সালেহ্ উদ্দিন আহমেদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মহম্মদ নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, ফরিদা, আখতার, বিধানরঞ্জন রায়, আফম খালিদ হাসান, নূর জাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ, ফারুখ-ই-আজম। 


এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারে নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ের অন্তর্ভুক্তি উল্লেখযোগ্য। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ন তাঁরা দু'জনই। ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার সুপারিশ তাঁরাই করেন। সেনার সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকেও শামিল ছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশের সরকারে এমন তরুণ ছাত্র নেতাদের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ছাত্র আন্দোলনই বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ত সরকারের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বলে ঢাকায় ফিরেই মন্তব্য করেন ইউনূস। 


পাশাপাশি, সরকারে রয়েছেন প্রাক্তন গভর্নর সালেহ্ উদ্দিন, লেখক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ, প্রাক্তন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল  তথা মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার'-এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর, সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী তথা প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতের প্রধান নির্বাহী সৈয়দা, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার তথা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ, বেসরকারি নীতি নির্ধারণকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা, প্রাক্তন নায়েবে আমির, সুন্নি দেওবন্দি ইসলামি ধর্মগুরু আফম খালিদ, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নুরজাহান, নির্বাচনী কাজকর্ম পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা 'ব্রতী'র কর্মকর্তা শারমিন, আপারেশন জ্যাকপটের শামিল বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুখ। এঁদের মধ্যে বিধানরঞ্জন রায়, ফারুখ এবং সুপ্রদীপ ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় শপথ নিতে পারেননি আজ। পরে শপথ নেবেন তাঁরা।


আরও পড়ুন: Sheikh Hasina: ভারতে কেনাকাটা করতে গিয়ে কম পড়ল টাকা, কী করলেন হাসিনা?