কলকাতা: করোনা ভ্যাকসিন সবার কাছে পৌঁছে দেওয়াই লক্ষ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন কবে আসবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়! তবে যে ভ্যাকসিনই আগে বাজারে আসুক, তার চাহিদা যে আকাশছোঁয়া হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মোটা মুনাফার লোভে, এই ভ্যাকসিন নিয়েও কালোবাজারি শুরু হবে না তো? কারণ, এর আগে রেমডেসিভিরের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। তাঁদের মতে, ভ্যাকসিনের কালোবাজারি ঠেকাতে প্রয়োজন সরকারি তৎপরতা।


মে মাসে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির প্রয়োগে ছাড়পত্র দেয় আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এরপরই এই ওষুধের চাহিদা হু হু করে বাড়তে শুরু করে। রেমডেসিভির ভারতের বাজারে আসার আগে বিপুল কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে। সেসময় কোথাও কোথাও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় রেমডেসিভির বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ওষুধটি বাজারে আসার পর দেখা যায়, তার দাম ২ হাজার টাকা। কিছুর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেই জানিয়ে দেওয়া হয়, করোনা চিকিৎসায় আর ব্যবহার রেমডেসিভির ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ভ্যাকসিন নিয়েও যাতে এরকম কালোবাজারি না হয়, সেজন্য ভ্যাকসিন বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক কুণাল সরকারের অভিমত, ডিসেম্বরে নতুন ভ্যাকসিন লঞ্চ হতে পারে। অন্য পথে ঢুকবে না, কালোবাজারি হবে না, এটা বলা সম্ভব নয়। এটা নিয়ে কালোবাজারির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।আগামী ৫-৬ মাস সময়টা দেখতে হবে। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষ সঠিক ভ্যাকসিন পাবে না জাল, সেটা দেখতে হবে সরকারকেই। চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন,  ভ্যাকসিনটা সরকার সব কিনে নিয়ে বণ্টন করলে কালোবাজারির সুযোগ নেই। সরকার আংশিক নিলে, সেক্ষেত্রে নজরদারি না থাকলে কালোবাজারির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।


ভ্যাকসিন নিয়ে জালিয়াতি বা কালোবাজারির আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয়, তা কার্যত পরিষ্কার হয়ে গেছে কিছু সংস্থার অসংবেদনশীলতায়। সাধারণ মানুষের ভয়ের সুযোগ নিয়ে ভ্যাকসিনে ভর করে কার্যত ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে এধরনের কিছু সংস্থা। সোশাল মিডিয়ায় একটি পর্যটন সংস্থার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে জেম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে মুম্বইয়ের একটি সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৯৯ টাকার বিনিময়ে আগামী ডিসেম্বরে তারা মুম্বই থেকে নিউইয়র্কের একটি বিশেষ ট্যুর আয়োজন করেছে। তিন রাত, চার দিনের সেই ট্যুরে যেমন থাকা, ঘোরা হবে, তেমনই দেওয়া হবে একটি করে করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ। সংস্থাটির দাবি, এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর ট্যুর সম্পর্কে জানতে চেয়ে ২ হাজারের বেশি ফোন,  ৭০০-র বেশি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এবং এক হাজারের বেশি ইমেল এসেছে।


কিন্তু, ভ্যাকসিনের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে হাতিয়ার করে ব্যবসা বাড়ানোর এই ভাবনার নিন্দায় সরব বিভিন্ন মহল। যদিও, পর্যটন সংস্থার ডাইরেক্টর এনিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।


বিশেষজ্ঞদের মতে, এরকম সুযোগ হাতে পেলে তো ধনীরা আগেভাগেই বিদেশে গিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলবে। তাই চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর দাবি, যাদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের কাছে আগে পৌঁছতে হবে।


ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার কাছে যে সমানভাবে ‘ভ্যাকসিন’ পৌঁছয় না, তার প্রমাণ মিলেছিল ২০০৯ সালেই। যখন সোয়াইন ফ্লু-র সময়ে বিশ্বের ধনী দেশগুলি ভ্যাকসিনের অগ্রিম বুকিং করে রেখেছিল। অর্থাৎ ভ্যাকসিন কার্যকর প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী সংস্থা তা ওই দেশগুলিকে দিতে বাধ্য থাকবে। যার ফলে আফ্রিকার বহু গরীব দেশ প্রথম দিকে ভ্যাকসিন পায়নি। কারণ আগাম বুকিং করার মতো অর্থ তাদের ছিল না। তাই এক্ষেত্রে করোনা মহামারীর ক্ষেত্রেও যাতে সেই ধনী-গরীবের বৈষম্য না হয়, সেদিকে সরকারের নজর দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।