পশ্চিম মেদিনীপুর: করোনা আবহে সম্প্রীতির নজির গড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মামুদপুর গ্রাম। হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন স্থানীয় মুসলিম যুবকরা। গতকাল বাড়িতেই মৃত্যু হয় মামুদপুরের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত বলাই রানার। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সংক্রমণের আশঙ্কায় ধারেকাছে ঘেঁষেননি প্রতিবেশীরা।দেহ সৎকারে ঘিরে সমস্যা তৈরি হয়। খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন মুসলিম প্রতিবেশীরা। তাদের সহায়তায় দেহ সত্কার করে মৃতের পরিবার।


বিশ্বে করোনায় রেকর্ড মৃত্যু ভারতে। ভয়ঙ্কর গতিতে ৩ লক্ষের দিকে এগোচ্ছে প্রাণহানির সংখ্যা। ২-১ দিন আগে পর্যন্তও যে প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা হচ্ছে-কথা হচ্ছে, হঠাত্‍ করেই শোনা যাচ্ছে করোনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তাঁর। এমনই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মামুদপুরে একইসঙ্গে অমানবিকতা ও মানবিকতার দেখা মিলল।


করোনা আতঙ্কে বয়সজনিত কারণে মৃতের দেহ সত্‍কারে এগিয়ে এলেন না প্রতিবেশীরা। শেষে পাশের পাড়ার বাসিন্দাদের উদ্যোগে হল সত্‍কার। বার্ধক্যজনিত রোগে মঙ্গলবার ভোরে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৭৫ বছরের বলাই রানার। সকাল ১০টা নাগাদ মামুদপুরের বাড়িতে আনা হয় মরদেহ। 


মৃতের ছেলে আর বউমা ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু, শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে সত্‍কারের জন্য কমপক্ষে পাঁচজন তো দরকার। এদিকে, মৃতের করোনা রিপোর্ট আগেই নেগেটিভ এলেও, আতঙ্কে পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেননি। ফলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাড়িতেই পড়ে থাকে বলাইয়ের মৃতদেহ। খবর পেয়ে এরপর এগিয়ে আসেন পাশের পাড়ার মিজানুর-আখতাররা। তাঁরাই দেহ নিয়ে যান শ্মশানে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।


মৃতের ছেলে সাধন রানা বলেন, বাবা মারা গিয়েছিল। করোনার ভয়ে কেউ আসেনি। এরা সহযোগিতা করেছে খুব ভাল লাগছে। দাসপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, যখন দেখলাম কেউ আসছে না। পরিবার অসহায় বোধ করছে, কী করে দাহ হবে? তারপর সহযোগিতা করি। দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া বলেন, ওখানে করোনা ভরে গেছে। তাই লোকে ভয় পেয়েছে। তবে শুনেছি মুসলিম ভাইরা এগিয়ে এসেছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আবহে মানুষের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন কিন্তু, মানসিক দূরত্ব নয়। বিপদে পাশে না দাঁড়ালে, সে কীরকম প্রতিবেশী?