নয়াদিল্লি: দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে, ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ উঠেছে বার বার। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের (RSS) শতবর্ষ উদযাপনে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে RSS-এর অবদান গোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। RSS স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করলেন তিনি। (Narendra Modi)
RSS-এর শতবর্ষ উদযাপনে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল বুধবার। সেখানে RSS-কে সম্মান জানাতে বিশেষ ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার মুদ্রাও প্রকাশ করেন মোদি। বক্তৃতা করতে গিয়ে সেখানেই স্বাধীনতা সংগ্রামে RSS-এর ভূমিকা ব্যাখ্য়া করতে শোনা যায় তাঁকে। (RSS and Freedom Struggle)
ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মোদিকে বলতে শোনা যায়, “জন্মলগ্ন থেকে RSS দেশ নির্মাণের কাজে যুক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পরমপূজ্য হেডগেওয়ার তাতে অংশ নেন। উনি অনেক বার জেলে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সংগঠনের অনেকেই জেলে যান সেই সময়।” স্বাধীনতা সংগ্রামে RSS অংশ নিয়েছিল এবং বহু বিপ্লবীকে RSS-কে আশ্রয় দিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
১৯৪২ সালে মহারাষ্ট্রের চিমুরে ইংরেজদের হাতে RSS-কে অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বলেও দাবি করেন মোদি। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পরও হায়দরাবাদের নিজামের হাতে অত্যাচারিত হতে হয় RSS-কে। গোয়া এবং দাদরা ও নগর হাভেলির স্বাধীনতায় আত্মবিসর্জন দিয়েছে RSS-ও। RSS বরাবর বিশ্বাস করে এসেছে, ‘দেশ সর্বপ্রথম’। তাদের একটাই লক্ষ্য় ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’।”
স্বাধীনতার পর RSS-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয় বলেও দাবি করেন মোদি। তাঁর বক্তব্য, “স্বাধীনতার পরও RSS-কে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। RSS-এর মূলস্রোতে উঠে আসাকে আটকাতে অগণিত ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভুয়ো মামলায় পবিত্র গুরুজিকে (গোলওয়ালকর) ফাঁসানো হয়েছিল। জেলে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি বেরিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘ভুল করে কখনও কখনও জিভ কামড়ে ফেলি আমরা, তাই বলে কি দাঁত ভাঙে’? নিষেধাজ্ঞা,ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও RSS কারণ প্রতি তিক্ততা ধরে রাখেনি। কারণ আমরা জানি, আমরা সমাজ থেকে আলাদা নই, সমাজেরই অংশ।”
এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল RSS. মহারাষ্ট্রের চিমুরের আন্দোলনে RSS-এক তরফে কর্মীদের সিভিল গার্ডদের সাহায্য় করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। মোদির ওই মন্তব্যের তাই তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা সর্দার বল্লভভাই পটেলের একটি চিঠি তুলে ধরেন তিনি, যাতে লেখা হয়, ‘RSS এবং হিন্দু মহাসভাকে নিয়ে বলব, গাঁধীজির হত্যার মামলাটি বিচারাধীন। ওি দুই সংগঠনের যোগদান নিয়ে কিছু বলা উচিত নয় আমার, কিন্তু আমাদের রিপোর্ট বলছে, তাদের কাজকর্মের ফলেই…বিশেষ করে প্রথমটির জন্য দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তার জন্যই এত বড় বিপর্যয় সম্ভব হল। আমার মনে কোনও সন্দেহই নেই যে হিন্দু মহাসভার চরমপন্থী অংশ এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। RSS-এর কাজকর্ম সরকার এবং দেশের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক’।
গাঁধীহত্যা মামলা থেকে পরে নিষ্কৃতী পায় RSS. মোদির মন্তব্যের পর কংগ্রেসের তরফেও একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যাতে বলা হয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে RSS-এর কোনও ভূমিকা ছিল না। ভগৎ সিংহকে তারা ‘নৈরাজ্যবাদী’ বলে মনে করত। ইংরেজ সরকারকে সাহায্য় করছিল তারা। স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি RSS.
CPM-এর সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবিও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। RSS-এর ভাষ্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করছেন উনি’। আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহের কথায়, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের ইংরেজদের সেনায় যোগ দিতে, তাদের সমর্থন করতে উৎসাহ জোগায় RSS. গভীর ভাবে ইতিহাস অধ্যয়ন করলেই বোঝা যাবে, RSS বিপ্লবীদের উপর গোপনে নজরদারি চালাত, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল ওরা, জাতীয় পতাকারও বিরোধী ছিল। দীর্ঘ ৫২ বছর নিজেদের সদর দফতরে তেরঙ্গা উত্তোলন করেনি ওরা। RSS বৈষম্যে বিশ্বাসী’।