কলকাতা : স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day 2022) ভাষণে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে একসারিতে বসিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম। যদিও এর সঙ্গে একমত নন ইতিহাসবিদরা। ঐতিহাসিক সত্য বিকৃত করে গান্ধী, নেহরু, পটেল, আজাদের অপমান। কড়া বার্তা সনিয়া গান্ধীর।


১৫ অগাস্ট। ৭৫ বছর আগে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল ভারত। মাঝরাতে দেশবাসীর উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু (Jawharlal Nehru)। আর স্বাধীনতা লাভের সেই মুহূর্তে, মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) ছিলেন কলকাতায়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে দেশ গঠনের কথা বলতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির ভাষণে উঠে এসেছিল তাঁদের নাম। তবে তা করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Sunash Chandra Bose) সঙ্গে তিনি এক আসনে বসিয়েছেন বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে (Vinayak Damodar Savarkar)। লালকেল্লায় ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আজ দেশবাসী মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বীর সাভারকরের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা স্বাধীনতার জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন।'


প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) যে বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন ইতিহাসবিদরা। খানিক সমালোচনার সুরেই নেতাজির পরিবারের সদস্য ও ইতিহাসবিদ সুগত বসু (Sugata Basu) বলেছেন, 'স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এই ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা। সাভারকর শুরুতে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন কিন্তু পরে তার থেকে সরে গিয়েছিলেন। নেতাজি তার ভারতের মুক্তি সংগ্রাম বইয়ে লিখেছেন ইংরেজেদের সৈন্যবাহিনীতে ঢুকে হিন্দুরা অস্ত্র চালাক। নেতাজি চেয়েছিলেন তার ঠিক বিপরীত। হিন্দু-মুসলমান-শিখ-ইসাহি ঐক্য তুলে ধরেছিলেন। তাই ওই দু’টি নাম একসঙ্গে করা যায় নেতাজি ও গান্ধীজি।'


শুধু গাঁধী-সাভারকরকে এক সারিতে বসানোই নয়, লালকেল্লার ভাষণে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেই জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Syamaprasad Mukherjee) নামও উঠে আসে নরেন্দ্র মোদির মুখে। তিনি বলেন, 'স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া, স্বাধীনতার পর দেশ গঠনকারী, ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ হোন, জওহরলাল নেহরু হোন, সর্দার বল্লভভাই পটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, দীনদয়াল উপাধ্যায়, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, বিনোবা ভাবে, নানাজি দেশমুখ, ভারতী, অগণিত মহাপুরুষকে আজ শ্রদ্ধা জানানোর দিন।' 


যে প্রসঙ্গে সুগত বসুর মন্তব্য, 'শ্যামাপ্রসাদ কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। নেতাজির মেজ দাদা শরৎচন্দ্র ইংরেজদের জেলে ছিলেন। ১৯৪২ সালে শ্যামাপ্রসাদ ব্রিটিশ গভর্নরকে পরামর্শ দিচ্ছেন কিভাবে ভারত ছাড় আন্দোলনকে দমন করা যায়। শরতচন্দ্র চাইছেন কিভাবে বাংলার ঐক্য ধরে রাখা যায় আর শ্যামাপ্রসাদ দাবি করছেন কিভাবে বাংলা ভাগ করা হয়। পূর্ব বাংলার দুর্দশার জন্য দায়ী শ্যামাপ্রসাদ।'



স্বাধীনতা দিবসের বার্তায়, মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। তিনি লেখেন, আজকের আত্মমগ্ন সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহান আত্মবলিদানকে তুচ্ছ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের স্বার্থে ঐতিহাসিক সত্য বিকৃত করে গাঁধী, নেহরু, পটেল, আজাদের মতো মহান জাতীয় নেতাদের অপমান করার চেষ্টা হচ্ছে। কংগ্রেস কঠোরভাবে এর প্রতিবাদ জানাবে। 


আরও পড়ুন- ধুলোয় ঢাকা বিপ্লবীদের স্মৃতি, মনে করাচ্ছে ASI