নয়াদিল্লি: মণিপুর হিংসা নিয়ে উত্তাল সংসদের বাদল অধিবেশন (Manipur Violence)। সেই আবহেই লোকসভায় জমা পড়ল অনাস্থা প্রস্তাব (No-Trust Motion)। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছে কংগ্রেস এবং কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ভারত রাষ্ট্র সমিতি (Parliament Monsoon Session)। গত দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতেও কেন্দ্র তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সংসদে তাঁর বিবৃতি দাবি করছেন। এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি না দেওয়াতেই অনাস্থা প্রস্তাব আনার পথে হাঁটলেন বিরোধীরা। 


এমনিতে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। তাই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলেও, ভোটাভুটিতে হলে বিজেপি-র জয় একরকম নিশ্চিত বলেই ধরছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিরোধীদের দাবি, সরকারকে উৎখাত করা তাঁদের লক্ষ্য় নয়, বরং সংবিধান অনুযায়ী সংসদে জবাবদিহি করতে বাধ্য প্রধানমন্ত্রী। তিনি উচ্চবাচ্য না করাতেই, সংসদে তাঁকে হাজির করতে বাধ্য হয়ে এই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়েছে।


অনাস্থা প্রস্তাব আসলে কী


সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, সরকারের উপর আস্থা নেই তাঁদের। এর ফলে সংসদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হয় শাসকদলকে। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পেলে পদত্যাগ করতে হয় সরকার থেকে। কিন্তু লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে, সরকারকে হটানো সম্ভব নয়।


বর্তমান সমীকরণ


এই মুহূর্তে লোকসভায় ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২। এর মধ্যে মোদি নেতৃত্বাধীন NDA জোটের আসনসংখ্যা ৩৩১। বিজেপি-র একার আসনসংখ্যাই ৩০৩। বিজেপি বিরোধী INDIA জোটের দখলে রয়েছে ১৪৪টি আসন। BRS, YSRCP এবং নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দলের সম্মিলিত আসনসংখ্যা ৭০। 


আরও পড়ুন: No Trust Motion: মণিপুর হিংসা নিয়ে কোণঠাসা কেন্দ্র, সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিল কংগ্রেস


অনাস্থা প্রস্তাবের গুরুত্ব


সংসদীয় গণতন্ত্রে অনাস্থা প্রস্তাব অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তাব এনে সরকারকে প্রশ্ন করতে পারেন বিরোধীরা। সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা যায় জনগণের সামনে, সংসদে সেই নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যায়। বিরোধীদের একজোট করার ক্ষেত্রেও কাজে দেয় অনাস্থা প্রস্তাব। সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে, সঙ্গে সঙ্গে সরকার পড়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকেও ইস্তফা দিতে হয়।


সংবিধানের ৭৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ মন্ত্রিসভা একমাত্র বিরোধীরই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন এবং রাজ্যসভা নয়, শুধুমাত্র লোকসভাতই আনা যেতে পারে অনাস্থা প্রস্তাব। লোকসভার যে কোনও দল অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে সরকারের বিরুদ্ধে। ক্ষমতায় থাকতে হলে, তার বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হয় সরকারকে।


অনাস্থা প্রস্তাবের প্রক্রিয়া


অনাস্থা প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে, সকাল ১০টার মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেলকে তা জানাতে হয়। লোকসভার অন্তত ৫০ জন সাংসদের সমর্থন থাকতে হয় এই অনাস্থা প্রস্তাবে। অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে আলোচনার জন্য় আরও একদিন বরাদ্দ করেন রাষ্ট্রপতি। দেশের রাষ্ট্রপতি সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পেলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়।


সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


এর আগে, একাধিক বার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে সংসদে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু থেকে নরেন্দ্র মোদি, সকলেই এই অনাস্থা প্রস্তাবের সাক্ষী হয়েছেন। ২০১৮ সালেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেবার ১৯৯ ভোটে জয়ী হয় তারা। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের নিরিখে আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পেরে এর আগে মোরাজি দেসাই, চরণ সিংহ, ভিপি সিংহ, অটলবিহারি বাাজপেয়ীর সরকার পর্যন্ত পড়ে যায়।