নয়াদিল্লি: রাজনৈতিক দল বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা। সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ডাকটিকিট এবং ১০০ টাকার মুদ্রা প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের ১০০ বছর পূর্তিতে কেন সরকারি ভাবে ডাকটিকিট এবং মুদ্রা প্রকাশিত হবে, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। (Narendra Modi)
বুধবার RSS-এর ১০০ বছর পূর্তি উদযাপনে যে ডাকটিকিট প্রকাশ করেন মোদি, তাতে ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে সঙ্ঘের কর্মীদের অংশগ্রহণকে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের ইতিহাসে RSS-এর অবদান, দেশের প্রতি তাদের সেবার বর্ণনা রয়েছে তাতে। (RSS Postage Stamp and Coin)
যে ১০০ টাকার মুদ্রাটি প্রকাশ করা হয়, তাতে একপিঠে অশোক স্তম্ভ রয়েঠে, অন্য পিঠে রয়েছে ‘ভারতমাতা’র মূর্তি। পাশে খাকি প্যান্ট, সাদা শার্ট পরিহিত RSS কর্মীদের শপথবাক্য পাঠের ছবি খোদাই করা রয়েছে। RSS-এর মন্ত্র ‘রাষ্ট্রায় স্বহা, ইদ রাষ্ট্রায়, ইদং ন মম’ও খোদাই রয়েছে, যার অর্থ, ‘রাষ্ট্রের প্রতি সব নিবেদিত, সব কিছু দেশের, আমার বলে কিছু নেই’।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে RSS-এর শতবর্ষ উদযাপনে ওই বিশেষ আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন RSS-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত, দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতও। ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ করে মোদি বলেন, “স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম ভারতমাতার কোনও মুদ্রায় জায়গা পেলেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং ঐতিহাসিক ভাবে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
কিন্তু RSS-এর শতবর্ষ উদযাপনে ভারত সরকার কেন ডাকটিকিট ও মুদ্রা প্রকাশ করবে, সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী শিবিরের নেতারা এ নিয়ে একযোগে সরব হয়েছেন। কংগ্রেস সাংসদ তথা দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল লেখেন, ‘RSS-এর সম্মানে মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সংবিধানের ঘোরতর অপমান হয়েছে। যে সংগঠন ঔপনিবেশিক প্রভুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, যারা আজও সমাজে বিষ ছড়াচ্ছে, তাদের সম্মান জানানোর মুহূর্ত ইতিহাসে কালো দিন হিসেবে লেখা থাকবে। সর্দার পটেল যে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, আজ ভারত সরকার তাদের সম্মান জানায় কী করে? যারা অম্বেডকরের সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলে, তারা জাতির আদর্শ হয় কী করে?’
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন লেখেন, ‘RSS-এর শতবর্ষ উপলক্ষে ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার মুদ্রা প্রকাশে দেশের সংবিধানের ঘোরতর অপমান হয়েছে। এতে এমন একটি সংস্থাকে বৈধতা দেওয়া হল, যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণই করেনি, যারা বিভাজনমূলক আদর্শ প্রচার করে, যা ঔপনিবেশিক শাসকের মানসিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই জাতীয় সম্মান আসলে আমাদের সত্যিকারের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিতে আঘাত করল। তাঁরা যে ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার গোড়ায় আঘাত করল’।
CPM-এর তরফে বিবৃতি দিয়েও এর তীব্র নিন্দা করা হয়। দলের নেত্রী বৃন্দা কারাট বলেন, “RSS-এর মঞ্চ থেকে অনেক কিছু বললেন প্রধানমন্ত্রী। মুদ্রা, ডাকটিকিট প্রকাশ করলেন। উনি RSS-এর প্রচারক হিসেবে কাজ করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়। উনি প্রমাণ করলেন, যে উনি সবার আগে প্রচারক, তার পর প্রধানমন্ত্রী।”