বেজিং: বৈরিতা ভুলে একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। তিয়াংজিনে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের পাশাপাশি, মুখোমুখি বৈঠকে বসেন মোদি ও চিনপিং। সেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষেই সওয়াল করেন দুই রাষ্ট্রনেতা। শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েন চলাকালীন এই সাক্ষাতের মাধ্যমে আমেরিকাকে বার্তা দেওয়া গেল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। (Narendra Modi Meets Xi Jinping)
আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই সাত বছর পর চিন সফরে গিয়েছেন মোদি। সীমান্ত সংঘাত ভুলে সেখানে পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলান মোদি ও চিনপিং। প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয় তাঁদের মধ্যে। চিন এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি, সীমান্ত সংঘাত পর্ব পেরিয়ে সমঝোতার প্রচেষ্টা, নতুন করে কৈলাস মানসরোবর যাত্রার সূচনা এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবার দিকগুলি তুলে ধরেন মোদি। (India-China Relations)
চিনের সঙ্গে সখ্য় নিয়ে মোদি বলেন, “দুই দেশের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। এর সঙ্গে মানবজাতির কল্যাণের প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে। পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা, সম্মান ও সংবেদনশীলতার উপর দাঁড়িয়ে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।”
অন্য দিকে, মোদিকে স্বাগত জানিয়ে চিনপিং ভারতকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। চিনপিংয়ের মতে, নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে হবে ভারত ও চিনকে। দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার প্রয়োজন রয়েছ, কৌশলী হতে হবে। চিনপিং বলেন, “চিন এবং ভারত, পৃথিবীর অন্যতম দুই সভ্য দেশ। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের অংশ। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকা জরুরি, ভাল প্রতিবেশী হয়ে উঠতে হবে। ড্রাগন এবং হাতিকে একজোট হতে হবে।”
শেষবার ২০১৮ সালে চিন সফরে গিয়েছিলেন মোদি। ডোকলাম সংঘাতের পর উহান গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পর ভারত ও চিনের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ চওড়া হয়। বিশেষ করে ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর তিক্ততা চরমে পৌঁছয়। সেই আবহে গত বছর অক্টোবরে রাশিয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যান মোদি। সেখানে চিনপিংও ছিলেন। কিন্তু পরস্পরকে মূলত এড়িয়েই চলেন তাঁরা।
কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই সমীকরণ বদলে গিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে যত বেশি চাপ সৃষ্টি করেছে, ভারত এবং চিনের মধ্যে বরফ ততই গলেছে। রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্য ট্রাম্প ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালে, নিঃশর্তে ভারতের পাশে দাঁড়ায় চিন। আমেরিকার বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলিকে একজোট হওয়ার বার্তা দেয়। চিন সফরে গিয়ে মোদিও সেই ডাকেই সাড়া দিলেন, আমেরিকাকে বার্তা দিলেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তবে ভারতের উপর আমেরিকা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালেও, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চিনের প্রতি তাদের আচরণ নরম। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে।