নয়াদিল্লি: ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আজ থেকে নয় (Science News)। আসল সত্য লুকনো হচ্ছে বলে উঠছে অভিযোগও। সেই আবহেই ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA. বিগত এক বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আকাশে উদয় হওয়া রহস্যজনক যান নিয়ে গবেষণা চালায় তারা। বৃহস্পতিবার তার বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করা হল। (NASA UAP Report)


এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে ৩৩ পাতার ওই রিপোর্ট তুলে ধরে NASA. তাতে বলা হয়েছে, Unidentified Flying Object (UFO) বা Unidentified Aerial Phenomenon(UAP) নিয়ে গবেষণা চালাতে নতুন বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির প্রয়োজন। অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট দিয়ে নজরদারি চালাতে হবে। রহস্যজনক উড়ন্ত যানগুলিকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।


এদিন যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে NASA, তাতে একাধিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন-



  • রহস্যজনক উড়ন্তযান চোখে পড়ার যে সমস্ত ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় না।

  • রহস্যজনক উড়ন্তযান চোখে পড়ার যে ঘটনাবলী সামনে এসেছে, তা পৃথিবীর রহস্যজনক ঘটনাবলীর মধ্যে অন্যতম।

  • NASA-র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন বলেন, “আমার বিশ্বাস, ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্র প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে।”

  • বর্তমানে  NASA-র যে অভিযানগুলি চলছে, মহাশূন্যের দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ভিনগ্রহীদের খোঁজে অনুসন্ধান চালানোকেও তার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। 

  • এতদিন পর্যন্ত যে সব উড়ন্ত যান চোখে পড়ার ঘটনা সামনে এসেছে এবং তার সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ যেসব তথ্য হাতে এসেছে, সেগুলির গুণমান তেমন উন্নত নয়।

  • উড়ন্ত যান সংক্রান্ত গবেষণার কার্যে নতুন একজন ডিরেক্টর আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে NASA. উড়ন্ত যান শনাক্তকরণে NASA-র তরফে তেমন উদ্যোগ নেই, তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে বলে সম্প্রতি সুপারিশ জমা পড়ে। তার জেরেই এই সিদ্ধান্ত।

  • NASA জানিয়েছে, উড়ন্তযান দেখতে পাওয়ার একাধিক রিপোর্ট সামনে এসেছে, ক্যামেরাবন্দি হওয়া নানা দৃশ্যও রয়েছে, কিন্তু তার উপর নির্ভর করে বৈজ্ঞানিক সমাধানসূত্র বের করা সম্ভব নয়।

  • NASA জানিয়েছে, পৃথিবীর উপরিভাগে তাদের যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে, তার মাধ্যমে উড়ন্তযানের মতো ক্ষুদ্র বস্তুকে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ সেগুলির ক্যামেরা ততটাও শক্তিশালী নয়। যে সেন্সর রয়েছে, তার সাহায্যে শুধু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, সাগর-মহাসাগরের পরিস্থিতিই টের পাওয়া যায়।

  • পেন্টাগনের তরফে প্রকাশিত ভিডিও-য় আমেরিকার পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের আকাশে কিছু উড়ন্তযান দেখা গিয়েছে বটে।  কিন্তু সেগুলি আসলে কী, তার সপক্ষে বিশদ তথ্য মেলেনি।

  • উড়ন্ত যান এবং ভিনগ্রহীদের খোঁজ পেতে যন্ত্রমেধা এবং Machine Learning-কে কাজে লাগানোর পক্ষে NASA.


তবে এর মধ্যে NASA-র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলশনের জবাবই নজর কেড়েছে সকলের। ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে ব্যাখ্য়া করলেও, ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বে তিনি বিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন বিল। তাঁর বক্তব্য, "জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এক্সোপ্ল্যানেটগুলির উপরও নজরদারি চালাচ্ছে। তাতে কিছু তথ্য হাতে এসেছে, আগামী দিনেও আসবে। একেবারে সঠিক দূরত্বে আরও একটি মাঝারি আকারের পাথুরে গ্রহ এবং তার নক্ষত্রের খোঁজ মিলেছে, যেখানে কার্বন রয়েছে। সেটি প্রাণধারণের উপযুক্ত হতে পারে।"


আরও পড়ুন: Science News: সৌরজগতের বাইরে আস্ত মহাসাগর! বিজ্ঞানীদের নজরে এক্সোপ্ল্যানেট K2-18 b


বিল আরও বলেন, "আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, ব্রহ্মাণ্ড এতটাই বড় যে তার সঠিক পরিমাপ আমিও বলতে পারব না। তাই তার কোথাও না কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে বলেই মনে করি আমি। কিন্তু আমাদের কিছু বিজ্ঞানীদের কাছে এই সম্ভাবনা জানতে চেয়েছিলাম, গাণিতিক পদ্ধতিতে হিসেব নিকেশ করে উত্তর চেয়েছিলাম। সেই যুক্তিকে সামনে রেখে যদি এগোই, তাহলে আমাদের ছায়াপথের মতো এমন হাজার ছায়াপথ রয়েছে মহাকাশে, যা হুবহু এক হতে পারে। সেই নিরিখে লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি এমন গ্রহ থাকতেই পারে।"


সমালোচকদের মতে, সরাসরি জবাব না দিয়ে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলেছেন বিল। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত NASA-রই একটি রিপোর্টকে সামনে আনছেন তাঁরা। সম্প্রতি এক্সোপ্ল্যানেট K2-18 b-তে আস্ত মহাসাগর, কার্বন এবং মিথেনের অণু থাকার প্রমাণ পেয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। শুধু তাই নয়, মেক্সিকো কংগ্রেসের একটি প্রদর্শনীতে দু'টি রহস্যজনক মমিও তুলে ধরা হয়। কয়েক সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের ওই দেহ দু'টির সঙ্গে মানবদেহের মিল রয়েছে। ওই দু'টি মমিই ভিনগ্রহী প্রাণীদের বলে দাবি উঠেছে। সেই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। তাই সোজাসুজি এখনও NASA সবকিছু খোলসা করছে না বলে মত সমালোচকদের একাংশের।