নয়াদিল্লি: ক্যান্সার থেকে মুক্ত স্ত্রীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবির অভিযোগ। অভিযোগ, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার বিরুদ্ধে মানুষকে বিপথে চালিত করারও। সেই নিয়ে এবার বিপাকে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার তথা রাজনীতিক নভজ্যোত সিংহ সিধু। ৮৫০ কোটি টাকার আইনি নোটিস পেলেন তিনি। (Navjot Singh Sidhu)
সিধুকে ৮৫০ কোটি টাকার আইনি নোটিস ধরিয়েছে ছত্তীসগঢ় সিভিস সোসাইটি। অ্যালোপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে ভুল দাবি করেছেন সিধু, তিনি মানুষের মনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সিধুর ওই দাবি মেনে চললে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে বলে লেখা হয়েছে নোটিসে। যে দাবি করেছেন সিধু, এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণ পেশ করতে হবে বলে লেখা রয়েছে। অন্যথায় মিথ্যে দাবি করে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য সিধুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে নোটিসে। (Cancer Treatment)
রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন সিধু। স্ত্রী নভজ্যোত কৌর সিধুর স্বাস্থ্য নিয়ে মন্তব্য করে এবার বিতর্কে জড়ালেন তিনি। গত সপ্তাহে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে স্ত্রীর লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা করেন সিধু। জানান, প্রাকৃতিক পথ্যের উপর ভর করেই স্টেজ ফোর ক্যান্সারকে হারিয়ে ফিরেছে তাঁর স্ত্রী।
গত ২১ নভেম্বর ওই সাংবাদিক বৈঠক করেন সিধু। জানান, শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পথ্য এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েটে ভর করে ক্যান্সারকে হারিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। সিধু জানান, মাত্র ৪০ দিন সময় রয়েছে বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাতে নিজে ক্যান্সার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি. বুঝতে পারেন, দুধ, আটা, ময়দা, চিনিই ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
সিধু দাবি করেন, চিনি আর কার্বহাইড্রেট শরীরে যাওয়া বন্ধ হলেই ক্যান্সারের কোষ মারা যায়। ডেয়ারি পণ্যও বাদ দেন স্ত্রীর ডায়েট থেকে। পাশাপাশি, সকালে উঠে লেবুজল, কাঁচা হলুদ, নিমপাতা খেতে শুরু করেন তাঁর স্ত্রী। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার, তুলসিপাতা যোগ করা হয় ডায়েটে। কুমড়ো, বেদানা, আমলকি, বিটের রস পান করান স্ত্রীকে, পাশাপাশি আখরোট খেতে দেন।
সিধু জানান, রান্না খাবার যা খেতেন স্ত্রী, সব রান্না হতো নারকেল তেল, আমন্ড তেলে। সকালের চায়ে দারচিনি, লবঙ্গ, গুড়, এলাচ ফেলে দেওয়া হতো। সন্ধের দিকেই নৈশভোজ সেরে ফেলায় জোর দিয়েছিলেন তাঁরা। আর এই ডায়েটই তাঁর স্ত্রীকে ক্যান্সারের গ্রাস থেকে বাঁচিয়েছে বলে দাবি করেন সিধু। তাঁর বক্তব্য ছিল, "টাকার জোরে নয়, কড়া রুটিন মেনে চলাতেই ক্যান্সারকে হারিয়েছে ও (স্ত্রী)। সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা হতে পারে ক্যান্সারের।"
সিধুর ওই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তাঁর দাবি নস্যাৎ করে দেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডিরেক্টর পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, ক্যান্সার রোগীকে অভুক্ত রেখে, ডেয়ারি পণ্য না খাইয়ে রোগমুক্তির দাবি সঠিক নয়। সাধারণ মানুষের সামনে এই ধরনের দাবি তুলে ধরা বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ক্যান্সার ধরা পড়লে টোটকা পরখ করে সময় নষ্ট না করে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন বলে মুখ খোলেন একে একে বহু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞই। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন এবং ক্যান্সারের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি এবং কেমোথেরাপির কার্যকারিতা যে প্রমাণিত, তা-ও তুলে ধরেন তাঁরা। এবার সরাসরি আইনি নোটিস পেলেন সিধু।