নয়াদিল্লি: নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির নয়া নামকরণ ঘিরে তরজা চরমে। রাজধানীর বুকে, তিন মূর্তি মার্গে অবস্থিত NMML-এর নাম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে 'নেহরু'র উল্লেখ (Nehru Memorial Renamed)। তার পরিবর্তে নয়া নাম রাখা হয়েছে 'প্রাইম মিনিস্টার্স মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি'। সেই নিয়ে এবার নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন নেহরু-গাঁধী পরিবারের সদস্য, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। জানিয়ে দিলেন, নাম নয়, কাজের জন্যই পরিচিত দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)।
স্বাধীনতা দিবসের ঠিক একদিন আগে, নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। সেই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কটাক্ষ, পাল্টা কটাক্ষের বাণ ছুটে চলেছে। বৃহস্পতিবার সেই নিয়ে রাহুলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। লেহ্-লাদাখ সফর শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "কাজের জন্য পরিচিতি নেহরুজির, নামের জন্য নন।"
নেহরু-গাঁধী পরিবারের সদস্য রাহুল যদিও নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের নয়া নামকরণ নিয়ে কোনও উষ্মা প্রকাশ করেননি, তবে কংগ্রেসের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, 'বিশ্বপ্রসিদ্ধ নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির নাম হল প্রাইম মিনিস্টার্স মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি। মোদির মনে আতঙ্ক ভর করেছে, হীনম্মন্যতা এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উনি, বিশেষ করে দেশের প্রথম এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। একটাই লক্ষ্য ওঁর, নেহরু এবং তাঁর উত্তরাধিকার অস্বীকার, বিকৃত, কলঙ্কিত এবং বদনাম করা। N-এর মুছে P লিখিয়েছেন উনি, এতে ওঁর Pettiness (সঙ্কীর্ণতা) এবং Peeve(অবজ্ঞাভরা আচরণ)ই প্রকাশিত হয়'।
শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী) নেতা সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, "মহাত্মা গাঁধী, পণ্ডিত নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিনায়ক সাভারকরের মতো ইতিহাস রচনার ক্ষমতা নেই ওদের। চাই নাম পাল্টে চলেছে। এ ছাড়া আর কী করতেই পারে ওরা? নাম পাল্টালেও, ইতিহাস পাল্টাতে পারবেন না আপনারা।" আম আদমি পার্টির সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, "মৃত্যুর পর কাউকে অসম্মান করার রেওয়াজ নেই আমাদের সংস্কৃতিতে। এই দেশগঠনে জওহরলাল নেহরুর বিরাট অবদান রয়েছে। ওদের সঙ্কীর্ণ রাজনীতিই প্রতিফলিত হচ্ছে।"
সমালোচনার মুখে পড়ে সাফাইও দিতে শোনা গিয়েছে কেন্দ্রকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় ভট্টের মতে, নেহরুকে অসম্মান করা হয়নি। নাম পাল্টানোর ফলে প্রত্যেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীই সমান সম্মান পাবেন। কিন্তু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নামে নামাঙ্কিত মিউজিয়ামের নাম পরিবর্তন নিয়ে সব মহল থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়ছে কেন্দ্র।
পরাধীন ভারতে মধ্য দিল্লির যে ভবনটি ফ্ল্যাগস্টাফ হাউজ নামে পরিচিত ছিল, স্বাধীনতার পর ওই বাড়িটিই হয়ে ওঠে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর বাসভবন। তাঁর মৃত্যুর পর ওই ভবনটিকে লাইব্রেরি এবং মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে সেখানে গড়ে তোলা হয় 'প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়', যেখানে ক্রমানুসারে এযাবৎকালীন দেশের সমস্ত প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব তুলে ধরার ব্যবস্থা করা হয়। গত বছর সেই মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়। এবার নাম থেকে সরিয়ে দেওয়া হল নেহরুর অস্তিত্ব।