নয়া দিল্লি: ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে উত্তাল নেপালের রাজধানী কাঠমনডু। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্প্রতি ২৬টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই বিক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে। আন্দোলনকারীদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা আদতে সোশাল মিডিয়ায় নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে সরকার।
এদিকে, ‘জেন জ়ি’ অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের বিদ্রোহের কাছে নতিস্বীকার করল নেপাল সরকার। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হল সমাজমাধ্যমের উপর থেকে। নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, বিক্ষোভ প্রত্যাহারের জন্য।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকার সম্প্রতি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্য়াপ, X হ্যান্ডেল-সহ ২৬টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই বিক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে। সোমবার পরিস্থিতি চরমে ওঠে। আন্দোলনকারীদের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা আদতে সোশাল মিডিয়ায় নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে সরকার।
নেপালের আন্দোলনকারী বলেন, 'আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হল সরকার খুবই দুর্নীতিগ্রস্ত। এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে যে সোশাল মিডিয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। যেখানে আমরা আমাদের মতামত রাখতে পারতাম। সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত হতে হতে ওরা সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।'
সোমবার সকালে রাজধানী কাঠমান্ডুর বাণেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পাল্টা দমনপীড়ন শুরু করে নেপাল সরকার। এরই মধ্যে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নেপালের সংসদে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীদের একাংশ। প্রতিবাদীদের দমন করতে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
নেপালে বেশকিছুদিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছে। সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভই কি এবার রাজপথে আছড়ে পড়ছে। সোমবার সংসদ ভবনেরও ভাঙচুর চালানো হয়। চলতে থাকে মুহুর্মুহু ইটবৃষ্টি। উপড়ে ফেলা হয়, সংসদ ভবনের স্টিলের বেড়া। সংসদ ভবনের একাংশে আগুন লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
পুলিশ-ভ্যানের মাথায় প্ল্যাকার্ড ও দেশের পতাকা হাতে উঠে পড়েন এক আন্দোলনকারী। এই পরিসস্থিতিতে সাফাইয়ের সুর শোনা গেছে প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির গলায়। তাঁর দফতর থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে নই, আমরা আইন-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন, অহঙ্কার এবং আমাদের দেশের অপমানের বিরুদ্ধে। এক বছর ধরে আমরা সোশাল নেটওয়ার্কগুলিকে রেজিস্ট্রেশন করতে, কর দিতে এবং নেপালের আইনের অধীনে জবাবদিহি করতে বলেছি। তাদের উত্তর ছিল, 'আমরা তোমাদের সংবিধান জানি না।'
প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জেরে ভারত নেপাল সীমান্তে জারি করা হয়েছে হাইঅ্যালার্ট। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নেপালের একাধিক জায়গায় কার্ফু জারি করা হয়েছে।