নয়াদিল্লি: আর আদ্যিকালের ট্রেনের নড়বড়ে জানলার পাশে, বাথরুম থেকে আসা দুর্গন্ধ সয়ে বসে থাকার অভিজ্ঞতা নয়।  ১৫১টি আধুনিক যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলির থেকে টেন্ডার ডাকল কেন্দ্র। এর ফলে এই ক্ষেত্রে ৩০,০০০ কোটিটাকার মত বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।


রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এই প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনে বেসরকারি বিনিয়োগের দরজা খুলছে তারা। এর ফলে ভারতীয় ট্রেনে আধুনিক যন্ত্রপাতি আসবে, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমবে, কমবে যাতায়াতের সময়। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, যাত্রী নিরাপত্তা বাড়বে। যাত্রী পরিবহণে চাহিদা ও সরবরাহের যে ঘাটতি তাও কমবে এর ফলে।

এবার দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কোন পথে হাঁটতে চাইছে ভারতীয় রেল

১. দেশজুড়ে ১০০টির মত রুটের তালিকা করেছে রেল। এই রুটগুলিতে ১৫০টি নতুন ট্রেন চলবে, নজিরবিহীনভাবে সবকটিই বেসরকারি। ১০০টি রুটতে ১০-১২টি ক্লাস্টারে ভাঙা হয়েছে।

২. মুম্বই-নয়াদিল্লি, চেন্নাই-নয়াদিল্লি, নয়াদিল্লি-হাওড়া, শালিমার-পুনে, নয়াদিল্লি-পটনা। এমনই কিছু রুটে চলবে এই সব বেসরকারি ট্রেন। ২০২১-এর মধ্যে ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর তৈরির কাজ শেষ হবে, তারপর আরও কিছু রুটে এ ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।

৩. প্রতিটি নতুন ট্রেনে থাকবে অন্তত ১৬টি করে কামরা। তবে সর্বাধিক কামরার সংখ্যা সেই রুটে যে দীর্ঘতম যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে তার কামরা সংখ্যাকে টপকাবে না। ট্রেন ছুটবে সর্বাধিক ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে।

৪. নীতি আয়োগের খসড়া বলছে, একটি বেসরকারি ট্রেন তার সফর শেষ করতে যে সময় নেবে তা ওই পথে চলাচল করা ভারতীয় রেলের সর্বাধিক গতিসম্পন্ন ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করা হবে, তবে ১০ শতাংশ এদিক ওদিকে সম্ভাবনা থাকছে।

৫. একই রুটে চলাচল করা সরকারি ট্রেনের থেকে বেসরকারি ট্রেন চালু হবে ১৫ মিনিট আগে। বেসরকারি ট্রেন যাত্রা শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে অন্য কোনও ট্রেন ওই রুটে রওনা দিতে পারবে না।

৬. আধুনিকতম প্রযুক্তি ও সেরা ফিচার ব্যবহার করার জন্য বেসরকারি ট্রেনচালক সংস্থাকে উৎসাহ দেওয়া হবে। যাত্রী সুরক্ষা থেকে আধুনিক জিপিএস যুক্ত অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম- নয়া প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য একটি তালিকা তৈরি করেছে রেল। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক

ক. বেসরকারি ট্রেনে আধুনিক ডিজাইনের বগি থাকবে, থাকবে স্টেনলেস স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের বহিরঙ্গ এবং ব্রেক সিস্টেম। থাকবে আধুনির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অ্যান্টি ক্লাইম্বিং ফিচারের সঙ্গে আধুনিক কাপলার থাকবেই।

খ. শারীরিকভাবে যাঁরা অক্ষম তাঁদের জন্য ভাঁজ করা সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকবে।

গ. স্টেশনে ট্রেন ঢোকার ব্যাপারে ঘোষণা করা জিপিএস যুক্ত সিস্টেম

ঘ.  এছাড়া উন্নততর শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। ট্রেনের ভেতর আরও ঝকমকে হবে, বাথরুমও উন্নত হবে আগের থেকে।

৭. বেসরকারি ট্রেনের কোনও রুটে কত ভাড়া হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা।

৮. প্রতিটি বাণিজ্যিক পরিষেবার আগে ভারতীয় রেলের কাছ থেকে রেকগুলির নিরাপত্তাজনিত সার্টিফিকেট নেওয়া জরুরি। ভারতীয় রেলের যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মান, তাতে উত্তীর্ণ হতে হবে।

৯. দু’ভাবে এই বেসরকারি টেন্ডার বেচে নেওয়া হবে- রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন ও রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল। রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন হল নিলামে যোগদানকারীদের ঝাড়াই বাছাই করে তাদের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রাথমিক তালিকা তৈরির জন্য। এরপর রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজালে এরা ফিক্সড প্রাইস বিড দেবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

১০. গত বছর ভারতীয় রেল বেসরকারি ট্রেন চালানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য আইআরসিটিসি-কে দায়িত্ব দেয়। দিল্লি-লখনউ রুটে চলে দেশের প্রথম বেসরকারি ট্রেন আইআরসিটিসি তেজস এক্সপ্রেস।