নয়াদিল্লি: ফের আদালতের দ্বারস্থ নির্ভয়াকাণ্ডের অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত বিনয় শর্মা। এবার নিজেকে মানসিক অসুস্থ বলে জানিয়ে করে আদালতে বিনয় দাবি করে, মানসিক অসুস্থতা, পাগলামো ও স্কিৎজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য তাকে যেন দিল্লির ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস পাঠানো হয়।
সোমবারও আদালতে একই আবেদন করেছিলেন বিনয়ের আইনজীবী এপি সিংহ। কিন্তু, বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন। উল্টে, ২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে বিনয় সহ চারজনের মৃত্যু পরোয়ানা নতুন করে জারি করে।
রাজ্য প্রশাসন ও নির্ভয়ার বাবা-মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত সোমবার ওই শুনানিতে সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবী এপি সিংহ দাবি করেন, বিনয় অনশন করে চলেছে এবং তার মানসিক স্থিতিও ভাল নয়। বিনয়ের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এবং তার সঠিক মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার আর্জিও জানান আইনজীবী।
সেই দাবি খারিজ করে বিচারক জানিয়ে দেন, ৩ মার্চ সকাল ৬টায় চারজনকে একসঙ্গে ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু, এরপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিনয়। এদিন ফের বিচারক ধর্মেন্দ্র শর্মার এজলাসে একই আবেদন নিয়ে হাজির হন বিনয়ের আইনজীবী। এই আবেদনের পরবর্তী শুনানি ২২ ফেব্রুয়ারি। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের জবাব তলব করেছে আদালত।
অতীতে, বিনয়ের এই মানসিক অসুস্থতার দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন সরকারি কৌঁসুলি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, বিনয় যদি সত্যিই মানসিক অসুস্থ হয়, তাহলে কী করে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছে? আইনজীবীকেও জানাতে হবে, কী করে তিনি একজন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির থেকে নির্দেশ পাচ্ছেন?
যদিও, বিনয়ের আইনজীবী এপি সিংহ ফের দাবি করেন, সম্প্রতি জেলে গিয়ে তিনি তাঁর মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, তাঁর মক্কেল তাঁকে চিনতে পারেনি। এমনকী, নিজের মাকেও চিনতে পারেনি বিনয় বলেও দাবি করেন এপি সিংহ।
তিনি আরও বলেন, জেলে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বিনয়। জেলে রেকর্ড রয়েছে। সে তীব্র অবসাদে রয়েছে। জেলের দেওয়ালে মাথা ঠুকে নিজেকে জখম করেছে। তার মাথা ও ডান হাতে চোট লেগেছে।
বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছে চার সাজাপ্রাপ্ত। জেলরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত ১৬ তারিখ দেওয়ালে মাথা ঠুকে নিজেকে আঘাত করার চেষ্টা করেছে বিনয়।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি, চার সাজাপ্রাপ্তকে আইনি সহায়তার সুবিধা দিতে এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেছিল দিল্লি উচ্চ আদালত। পাশাপাশি, আদালত এ-ও জানিয়েছিল, যেহেতু চার অভিযুক্ত একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাই তাদের ফাঁসিও দিতে হবে একসঙ্গেই।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দিল্লিতে চলন্ত বাসে প্যারা-মেডিক্যাল ছাত্রী ২৩-বছরের নির্ভয়াকে গণধর্ষণ করা পর অত্যন্ত নৃশংসতার সঙ্গে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান নির্ভয়া। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হয় এক নাবালক সহ ৬ জন। নাবালক তিন বছর জুভেনাইল হোমে কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। বাকি পাঁচজনের মধ্যে একজন অভিযুক্ত রাম সিংহ জেলে আত্মহত্যা করেন।