নয়া দিল্লি: কোভিড ভ্যাকসিনেই কি লুকিয়ে হার্ট অ্যাটাকে অকাল মৃত্যুর কারণ? এই জল্পনায় উত্তাল দেশ। ২০২০ সালের পর থেকে কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি কর্নাটকের হাসানে একের পর এক হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত মানুষ। এই প্রেক্ষাপটিউ কোভিড ভ্যাকসিন নিরাপদ ছিল কি না , তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।   এইমস-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া এই বিষয়ে কথা বলেছেন সংবাদ সংস্থা আইএনএসের সঙ্গে।  আইসিএমআর এবং এইমস-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে , কোভিড-19 টিকার সঙ্গে আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যুর মধ্যে কোনও যোগসূত্র নেই।

গুলেরিয়া জানান, অনেকেই ভাবছেন, কোভিড ভ্যাকসিন নিরাপদ ছিল না।  কিন্তু আইসিএমআর এবং এইমস-এর গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে যে এই ধরনের কোনও সংযোগ নেই। তিনি বলেন, 'ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমরা কোভিডের আগে থেকেই তরুণদের হৃদরোগে আক্রান্ত হতে দেখেছি।  এগুলি সাধারণত জিনগত কারণ এবং প্রধান জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।' গুলেরিয়া কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকেও দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, ইদানীং বেশিরভাগের খাদ্যাভ্যাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।  সবুজ শাকসবজি এবং ফলের বদলে অনেকেরই পছন্দ ফাস্ট ফুড !  শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পেয়েছে। বসে বসেই কাজ করেন বেশির ভাগ। বিশেষত তরুণদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বলে কাজের অভ্যেস বেড়েছে। গুলেরিয়ার মতে, 'বাড়ছে স্থূলতা। এই ধরনের জীবনধারা এবং জিনগত কারণে, মানুষের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের  প্রবণতা বেড়েছে, যা পশ্চিমের দেশগুলিতে ১০ বছর আগেই ঘটেছে।  সুতরাং, এই  প্রবণতার জন্য টিকা দায়ী নয়'

ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, হতে পারে টিকা সহ প্রতিটি ওষুধের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে ।   কিন্তু যেহেতু টিকা স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের দেওয়া হয়, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়গুলির উপর নজর রাখে। হু এবং অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুব কম এবং বরং এর উপকারিতা অনেক বেশি। গুলেরিয়ার মতে, ভারত এই টিকাদান কর্মসূচি সফল ভাবে করতে পেরেছিল বলেই, কোভিড-19-এর বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা সম্ভব হয়েছে।  দুটি টিকা দ্রুত চালু করা হয় তখন এবং এই টিকাগুলি একসঙ্গে অনেক জীবন বাঁচাতে পেরেছিল।  সুতরাং, আমি বলব যে টিকা অত্যন্ত উপকারী, ক্ষতিকারক নয়। চিকিৎসক বলেন, এই ধরনের মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক এবং উদ্বেগজনক।  তবে এগুলির বেশিরভাগই এখনও অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং সেডেন্টারি লাইফের সঙ্গে সম্পর্কিত।  তরুণদের আরও সচেতন হতে হবে।  ব্যায়াম করা উচিত, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত এবং সুনির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখা উচিত।   ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে ভারতীয় খাবার খাওয়া দরকার। তিনি দাবি করেন, 'কোভিড ভ্যাকসিনের সঙ্গে এই ধরনের মৃত্যুর কোনও যোগসূত্র নেই।  তবে হ্যাঁ, এটা সত্যি যে তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে '

অ্যান্টি-এজিং ওষুধ ও হার্ট অ্যাটাক

অভিনেত্রী শেফালি জরিওয়ালার মৃত্যুর পর অ্যান্টি-এজিং ওষুধের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের  সংযোগ নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়ার মতে,   অ্যান্টি-এজিং ওষুধ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তবে এগুলির ব্যবহারের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।   এই পণ্যগুলির মধ্যে অনেকগুলি সঠিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই বিক্রি করা হয় । কয়েকটির ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ওষুধ নিয়ন্ত্রণের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।