নয়াদিল্লি: তীব্র ঠান্ডায় জবুথবু রাজধানী দিল্লি। শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোটা উত্তর ভারত। কলকাতাতেও ঠান্ডা পড়েছে বেশ জমিয়ে। কিন্তু জানুয়ারির মাঝামাঝি হয়ে গেলেও, এখনও শুষ্ক ভূস্বর্গ জম্মু ও কাশ্মীর। অন্য বছর এই সময় তুষারের সাদা চাদরে ঢেকে দেয় উপত্যকাকে। কিন্তু এ বছর দু'এক জায়গায় বরফের গুঁড়ো ছাড়া, তুষারপাত থেকে বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছে কাশ্মীরের সমতলের মানুষজন। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই কাশ্মীরের এমন পরিস্থিতি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। (Kashmir Dry Spell)


রবিবার দিল্লির তাপমাত্রা একধাক্কায় ৩.৫ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে। কিছু জায়গায় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ৩.৪ ডিগ্রিতে। কিন্তু রবিবার কাশ্মীরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি রয়েছে, যা জানুয়ারি মাসে কাশ্মীরের এযাবৎকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।  গত দু'দশকে অন্তত জানুয়ারি মাসে পারদ এত চড়েনি সেখানে। জানুয়ারি মাসে কাশ্মীরে তুষারপাতে ১০০ শতাংশ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।  বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও, তা তুষারপাতের জন্য যথেষ্ট নয়। (No Snow in Kashmir)


কাশ্মীরের এমন পরিস্থিতি নিয়ে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ইদানীং কালে বেশ চোখে পড়ছে। তাপমাত্রার ওঠাপড়া নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রীষ্মকালেও এই পরিবর্তন চোখে পড়ছে। তবে এখনও তুষারপাত না ঘটলেও, কিছুদিনের মধ্যেই ভূস্বর্গে তুষারপাতের দেখা মিলবে বলে আশাবাদী মৌসম ভবন। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পেরোতে চললেও, তুষারপাতে আগে এত দেরি কখনও হয়নি। 



আরও পড়ুন: Ram Mandir Inauguration: বিধিনিয়ম না মেনে আত্মপ্রচার আসলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ: শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ


কাশ্মীরের আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে প্রভাব পড়েছে সেখানকার পর্যটন ব্যবসাতেও। এই সময় সেখানে ভিড় করেন প্রকৃতিপ্রমীরা। বরফের উপর স্কি চলে। বিশেষ করে গুলমার্গের হোটেলগুলিতে জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু এবছর হোটেল বুক করেও, বাতিল করেছেন বহু পর্যটক। কিন্তু এবছর তার কিছুই হয়নি। সেই নিয়ে একদিন আগে হতাশা প্রকাশ করেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা উপত্যকাপর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। কাশ্মীরের আবহাওয়ায়য় এই গুরুতর পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। 


কাশ্মীরের এমন পরিস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আবহবিদ এম রাজীবন, যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিবও ছিলেন এক সময়, তিনি জানিয়েছেন, তুষারপাতের নেপথ্যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। সমতলে বৃষ্টি, পাহাড়ে তুষারপাত, সব কিছু ঘটে তারই দৌলতে। কিন্তু এ বছর তেমন কিছু ঘটেনি। শীতের আগে যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা প্রবেশ করে, এখনও পর্যন্ত ভারতে প্রবেশই করেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এমন পরিস্থিতি।   আগামী ৩০-৪০ বছর এই অবস্থা বজায় থাকলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই বলে দাবি রাজীবনের। 


তবে শুধু কাশ্মীরই নয়,  শিমলায় গঙ্গোত্রী হিমবাহে বেড়াতে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে পর্যটকদের। হিমালয়ের পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাই তুষারপাত থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সিকিম এবং অরুণাচলপ্রদেশে তুষারপাত হলে, অন্য বছরের তুলনায় তা অতি সামান্য।