নয়াদিল্লি: দুনিয়ায় যা-ই ঘটে যাক না কেন, উত্তর কোরিয়ার (North Korea) শাসক কিম জং উনকে (Kim Jong Un) নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। কথায় কথায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হোক বা বিশ্বের তাবড় দেশকে হুমকি দেওয়া, বারং বার খবরে উঠে আসেন তিনি। নিজের চারপাশে রহস্যের ঘনঘটা বজায় রাখতে পছন্দ করেন তিনি নিজেও। সেই রহস্যমোড়া জগতে উঁকিঝুঁকি দেওয়া গেল এতদিনে। অত্যধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কিমের লিম্যুজিন বর্মাচ্ছাদিত একটি ট্রেনে উঠতে দেখা গেল। (Viral Video)
এই মুহূর্তে রাশিয়া সফরে রয়েছেন কিম। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি হওয়ার কথা তাঁর। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে, রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র এবং সাঁজোয়া গাড়ি দিয়ে সাহায্য় করতে পারেন কিম। যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও দুই দেশের মধ্যে কথা চলছে। কিন্তু বন্ধু দেশে গিয়েও নিজের নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখেননি তিনি। রাশিয়ায় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে কিমের জন্য বরাদ্দ চেয়ারটিকেও স্ক্যান করতে দেখা যায় কিমের নিরাপত্তারক্ষীদের। বিষ মাখানো আছে কিনা, তাও পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-য় তার একঝলক দেখা গেল। ওই ভিডিওয় কিমের সাঁজোয়া মার্সিডিজ মেব্যাক লিম্যুজিন গাড়িটিকে রেল স্টেশনে দেখা গিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবুজ রংয়ের একটি ট্রেন। তার দরজা লাগোয়া, প্ল্যাটফর্মের উপর উঁচু এবং ঢালু জায়গা তৈরি করা হয়েছে। সেই ঢালু জায়গা থেকে, একটু বেঁকে ট্রেনের ভিতর ঢুকে যেতে দেখা গিয়েছে কিমের সাঁজোয়া মার্সিডিজ মেব্যাক লিম্যুজিন গাড়িটিকে।
কিমের নিরাপত্তা বরাবরই অত্যন্ত আঁটোসাটো। কিমের চারিদিকে কার্যতই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখেন তাঁরা। দেশের অন্দরে, দেশের বাইরে সর্বত্র কিমকে আগলে রাখেন। এর পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ওই সাঁজোয়া মার্সিডিজ মেব্যাক লিম্যুজিন গাড়ি ব্যবহার করেন কিম। এর পাশাপাশি ওই ট্রেনটিও কার্যতই লোহার বর্মে ঢাকা। ট্রেনের মধ্যেও ঠাসা অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, যাতে হামলা হলে প্রতিরোধ করা যায়।
এমনিতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পুলম্য়ান গার্ড লিম্যুজিন গাড়ি ব্যবহার করেন কিম। এ ছাড়াও মার্সিডিজ মেব্যাক ৬২ রয়েছে তাঁর কাছে। ২০১৩ সালে ওই গাড়ির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আপাতত এস-ক্লাস গাড়ির ক্ষেত্রে মেব্যাক নামটি ব্যবহার করে মার্সিডিজ বেঞ্জ। শোনা যায়, ২০১৮ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিমকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ, সিক্রেট সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণে থাকা 'দ্য বিস্ট' গাড়িতে চাপিয়ে ঘোরান। সেখান থেকেই লিম্যুজিনের প্রতি আগ্রহ জন্মায় কিমের।
উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় আস্ত ট্রেনও নিয়ে গিয়েছেন কিম। অনেকের কাছে সেকেলে বলে মনে হলেও, ওই ট্রেনটিকে 'চলমান দুর্গ' বলা হয়। ট্রেনের জানলাগুলি সব বুলেটপ্রুফ। দেওয়াল এবং মেঝে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে বিস্ফোরণ ঘটলেও, কোনও ক্ষতি না হয় ট্রেনের। ট্রেনের ভিতর গাড়ি রাখার জায়গা যেমন রয়েছে, তেমনই আস্ত একটি হেলিকপ্টারও রয়েছে, যাতে বিপদকালে তাতে চেপে পালানো যায়। হামলার জবাব দেওয়ার জন্য ঠেসে রাখা আছে অস্ত্রশস্ত্রও।
ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার গতিবেগ ওই ট্রেনটির। কামরার সংখ্যা ৯০। সবেতেই ঠাসা অস্ত্রশস্ত্র। গতি তুলনামূলক শ্লথ হলেও, নিরাপদ বলেই ওই ট্রেনটিকে ভরসা করেন কিম। ভিয়েতনামে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতেও ওই ট্রেন নিয়ে হাজির হন কিম। সবরকম বিলাসিতার ব্যবস্থাও রয়েছে ট্রেনের অন্দরে।