কলকাতা: নাৎসি-জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডে যে হারে ইহুদি-নিধন করেছিল, তা নিয়ে কি সবটা জানতেন তৎকালীন পোপ দ্বাদশ পিউস? হালে হদিস পাওয়া একটি চিঠি থেকে অন্তত তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে, দাবি ইতালির এক সংবাদপত্রের। 'Corriere della Sera' নামে ওই সংবাদপত্রটি এই সপ্তাহান্তে 'চিঠির' কথা প্রকাশ করে। তাদের দাবি, এই চিঠি খোদ ভ্যাটিক্যানের আর্কাইভ থেকে পাওয়া যায় যার পর থেকে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে 'হলোকস্ট' ও পোপ দ্বাদশ পিউসের ভূমিকা। তবে এবিপি আনন্দ 'চিঠিপত্রের' আলাদা করে এর সত্যতা যাচাই করেনি।
কী জানা গেল?
যে চিঠি ঘিরে শোরগোল, তার তারিখ ১৯৪২ সালের ১৪ ডিসেম্বর। ইতিহাস বলছে, নাৎসি-জার্মানি সে সময় পোল্যান্ডে নির্বিচারে ইহুদিনিধন চালাচ্ছে। সেই সময়ই এক জেসুইট যাজক, পোপ দ্বাদশ পিউসের সচিবকে চিঠিটি লিখেছিলেন বলে দাবি ইতালির ওই সংবাদপত্রের। গিওভানি কোকো নামে ভ্যাটিকান-সংক্রান্ত বিষয়ের এক জন গবেষকের আগামী বইতে এই চিঠির কথা থাকবে বলে সূত্রের খবর। তবে বইপ্রকাশের আগেই কোকো ইতালির সংবাদপত্রটিকে জানান, সে সময় নাৎসিরা যতটা সুচারুভাবে ইহুদিদের শেষ করছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া রয়েছে ওই চিঠিতে। জার্মানিতে ক্যাথলিকদের যে অংশ হিটলার-বিরোধিতা করতেন, তাঁদেরই একটি চার্চের সূত্রে এই বিশদ তথ্য জোগাড় করেছিলেন ওই জেসুইট যাজক। লেখকের নাম রেভারেন্ড লোথার কোয়েনিগ। ঘটনাচক্রে, তখন যিনি পোপ দ্বাদশ পিউসের সচিব, তিনিও ছিলেন এক জন জার্মান জেসুইট যাজক। নাম রেভারেন্ড রবার্ট লেইবার। চিঠিতে রেভারেন্ড লেইবারকে 'প্রিয় বন্ধু' সম্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেন গিওভানি কোকো। তার ছত্রে ছত্রে বিবরণ, কী ভাবে প্রত্যেক দিন পোল্যান্ডের 'রাভা রাসকা' এলাকার হাজার ছয়েক ইহুদিকে শেষ করছে নাৎসি বাহিনী। তাঁদের পাঠানো হচ্ছে 'বেলজেক ডেথ ক্যাম্প'-এ।
কেন বিতর্ক?
এহেন অবস্থায় ক্যাথলিক জগতের তৎকালীন ধর্মগুরুর ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে কার্যত আড়াআড়ি বিভক্ত ইতিহাসবিদরা। একদল মনে করেন, নীরব কূটনীতি অনুসরণ করে আসলে তিনি ইহুদিদের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। অন্য দলের বক্তব্য, হলোকস্টের নির্মমতা দিনের পর দিন বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও চুপ ছিলেন পোপ দ্বাদশ পিউস। এই চিঠি সেই বিতর্ক আরও উসকে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। ভ্যাটিক্যানের তরফে সে সময় অবশ্য় দাবি করা হয়েছিল, নাৎসি বাহিনীর নির্যাতন নিয়ে কোনও কূটনৈতিক রিপোর্ট 'নিশ্চিত' করতে পারেনি তারা। তাই তার সমালোচনাও করতে পারেনি। কিন্তু এই চিঠির সত্যতা প্রমাণিত হলে সেই দাবিও প্রশ্নের মুখে পড়ে, বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:'ইন্ডিয়া' জোটের সমন্বয় কমিটিতে সিপিএমের প্রতিনিধি থাকবেন না, সিদ্ধান্ত পলিটব্যুরোর বৈঠকে