নয়াদিল্লি: লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের তদন্ত চলাকালীনই ভয়ঙ্কর ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরে। নওগাম থানায় রাসায়নিক থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত ন’জন মারা গিয়েছেন এই ঘটনায়। আহত হয়েছেন ২৯ জন, যার মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা গুরুতর। ফরিদাবাদে উদ্ধার অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পরীক্ষার সময় বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানা গিয়েছে। এই বিস্ফোরণ নেহাত দুর্ঘটনা, না কি অন্য কিছু ঘটেছে, সেই নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। আর সেই আবহেই নওগাম থানায় বিস্ফোরণের দায় নিল People’s Anti Fascist Front (PAFF). যদিও উপত্যকার পুলিশ এই বিস্ফোরণকে 'দুর্ঘটনা' বলেই উল্লেখ করেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শ্রীনগরের নওগাম থানায় তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ওই থানায় এনে মজুত করা হয়েছিল। সেই নিয়ে পরীক্ষা চলাকালীনই বিস্ফোরণ ঘটে। যে ন’জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পুলিশকর্মীর পাশাপাশি, ফরেন্সিক টিমের আধিকারিকরাও ছিলেন। এই ঘটনায় নাশকতার যোগ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের DGP নলিন প্রভাত সাংবাদিক বৈঠকে এই বিস্ফোরণকে 'দুর্ঘটনা' বলেই উল্লেখ করেন. এ নিয়ে কোনও জল্পনা-কল্পনা অপ্রয়োজন বলে জানান তিনি। তবে দুর্ঘটনা এবং নাশকতা, দুই সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর। (Jammu and Kashmir News)
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সচিব প্রশান্ত লোখান্ডেও জানান, নওগাম থানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় জল্পনা-কল্পান এড়িয়ে চলা উচিত। দুর্ঘটনাবশতই বিস্ফোরণ ঘটেছে। নওগাম থানার পুলিশ কিছু আপত্তিজনক পোস্টার বাজেয়াপ্ত করে। সেই অনুযায়ী মামলার তদন্ত চলছিল। নওগাম থানায় এফআইআর-ও দায়ের হয়েছে। যে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়, তা থানার খোলা জায়গায় সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল। সব সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছিল সেখানে। কিন্তু আচমকাই দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণ ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে PAFF হামলার দায় স্বীকার করায় জল্পনা বেড়েছে। কারণ PAFF পাকিস্তানের জঙ্গি সংস্থা জইশ-ই-মহম্মদের ছায়া সংস্থা। তাই বিস্ফোরণে থানা উড়ে গিয়েছে, না কি থানা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। কারণ বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, নিহতদের দেহাংশ দূরে ছিটকে পড়ে। থানাটি কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়িও পুড়ে গিয়েছে বলে খবর। ধ্বংসাবশেষের নীচে কেউ চাপা পড়ে আছেন কি না, তা জানা যায়নি।
নওগাম থানা চত্বরে একটি গাড়িও দাঁড় করানো ছিল, যা বেআইনি কার্যকলাপ সংক্রান্ত একটি মামলায় সম্প্রতি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেটিতে IED জাতীয় বিস্ফোরক রাখা ছিল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। একটি বিস্ফোরণ ঘটে, না কি দু’টি সেই নিয়েও ধন্দ ছড়িয়েছে।
কিন্তু যে PAFF নওগাম থানা উড়িয়ে দেওয়ার দায় স্বীকার করেছে, তারা কে? তারা আসলে জইশের ছায়া সংগঠন। ২০২৩ সালে ওই সংগঠনকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য় সংরক্ষিত বিশেষ মর্যাদা খর্ব করা হলে ওই সংগঠনটি মাথাচাড়া দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উপত্যকার তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের দলে টানে PAFF, তাদের দিয়ে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালায়। তরুণদের সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসা, তাদের অস্ত্র চালানো এবং বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রশিক্ষণও দেয় PAFF.
গত কয়েক বছরে উপত্যকায় একাধিক নাশকতামূলক হামলায় নাম জড়িয়েছে PAFF-এর। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটানো হয় ২০২১ সালে, পুঞ্চের মেন্ধার এলাকায়, যাতে নয় জওয়ান প্রাণ হারান। ওই বছরই বিজেপি নেতা রাকেশ পণ্ডিতকে গুলি করে খুন করে PAFF জঙ্গিরা। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের পাঁচ সৈনিক তাদের হামলায় প্রাণ হারান। সেনার গাড়িতে সটান হামলা চালায় জঙ্গিরা. এক মাস পর আবার কেশরী হিলস ফরেস্টে IED বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাঁচ সৈনিককে হত্যা করে তারা।