ভুবনেশ্বর: সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে তপ্ত ওড়িশার ভদ্রক। সংঘর্ষে আহত পুলিশের বেশ কয়েক জন। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। একাধিক জায়গায় ১৬৩ ধারা (আগে যা ১৪৪ ধারা ছিল) জারি করা হয়েছে। জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেমন, চলছে পুলিশি টহলদারিও। (Odisha Communal Tension)


শনিবার সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব সত্যব্রত সাহু জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভদ্রক জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, X (সাবেক ট্যুইটার) এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মও ব্যবহার করা যাবে না। ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ২টো পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। (Odisha Internet Shutdown)


রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে ঘিরে সম্প্রতি ভদ্রক এবং ধামনগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সামনে এসেছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, X-এর মতো প্ল্যাটফর্ম  হিংসায় হিংসার আগুনে ঘি ঠালতে পারে। ক্ষতিসাধনের লক্ষ্যে পোস্ট করা বার্তা ছড়িয়ে পড়লে হিংসা আরও বাড়তে পারে। শান্তি এবং সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত।



এই মুহূর্তে ভদ্রকের বিভিন্ন এলাকা সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে তপ্ত, যার নেপথ্যে রয়েছে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। এলাকার বাসিন্দা এক যুবক সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিতর্কিত পোস্ট লেখেন, যা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মবিশ্বাস এবং আবেগে আঘাত করে বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ করেন ওই সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে শুক্রবার রাস্তায় নামেন তাঁরা, যা কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। 


পুলিশের দাবি, আগে থেকে মিছিলের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তাই মিছিল আটকানো হয় মাঝ রাস্তায়। তাতেই দুই পক্ষের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট-পাথর ছোড়েন বলে অভিযোগ।  এতে DSP-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ভদ্রকের তেহসিলদারের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ। পাশাপাশি, সাঁথিয়া এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেই হিংসার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে ধামনগরেও। 



পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে দেখে জেলা প্রশাসনের তরফে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয় প্রথমে। কোনও রকম মিটিং-মিছিল, জমায়ের, প্রতিবাদ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারায় পুরুনা বাজার, ধামনগর থাবা এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ হয়েছে ইতিমধ্যেই। মোট ১৪ পল্টন পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এক পল্টনেই ৩০ জন পুলিশকর্মী থাকেন। হিংসার ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নজরদারি চলছে বিভিন্ন এলাকায়।


আগেও সাম্প্রদায়িক হিংসার সাক্ষী থেকেছে ভদ্রক। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি চরমে পৌঁছয় সেখানে। প্রায় ৪৫০টি বাড়ি, দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় সেবার। একমাস ধরে চলেছিল কার্ফু, যা রাজ্যের ইতিহাসে দীর্ঘতম।