ওড়িশা: প্রায় মাস পেরোতে চলল। দোসরা জুন বালেশ্বরের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার ক্ষত এখনও কাটেনি। এখনও বহু পরিবার হাতে পায়নি তাঁদের ঘরের লোকের দেহ। প্রায় একমাস ধরে দোরে দোরে ঘুরতে হচ্ছে তাঁদের। কাছের লোকের এমন করুণ পরিণতিতে ভয়াবহ শোক, তার উপর দেহ পেতে চরমে উঠেছে ভোগান্তি।


বিহারের বেগুসরাই জেলার বরি-বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাসন্তী দেবী। PTI সূত্রে খবর, তিনি গত ১০ দিন ধরে AIIMS-এর কাছে একটি গেস্ট হাউসে বসে রয়েছন, শুধুমাত্র তাঁর স্বামীর দেহ হাতে পাওয়ার জন্য। বাসন্তী দেবী বলেন, 'আমার স্বামী যোগেন্দ্র পাসোয়ান, একজন ঠিকা শ্রমিক। বাহানাগা বাজারের কাছে রেল দুর্ঘটনার দিন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে ছিলেন তিনি।' দেহ পেতে প্রবল ভোগান্তি হচ্ছে তাঁর। তাঁর দাবি, কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও দিনক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না যে কবে তাঁর হাতে দেহ দেওয়া হবে। তাঁর অভিযোগ, 'কেউ কেউ বলছে পাঁচ দিন লাগবে। কেউ কেউ আবার বলছে আরও বেশি সময় লাগবে। প্রশাসনে কোনও স্বচ্ছতা নেই।' তাঁদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। যোগেন্দ্র পাসোয়ানের রোজগারেই চলত সংসার। এখন অথৈ জলে পড়েছেন তিনি। পাঁচ সন্তানের মধ্যে ২জনকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তিনি। বাকিরা রয়েছে বিহারে।


একই অবস্থা পূর্ণিয়ার বাসিন্দা নারায়ণ ঋষিদেবের। ৪ জুন থেকে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। নাতি সুরজ ঋষিদেবের দেহ হাতে পাওয়ার জন্য়ই এত অপেক্ষা। দুর্ঘটনার দিন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন তিনি। চাকরির খোঁজে চেন্নাই যাচ্ছিলেন তিনি। দেহ পেতে DNA-টেস্ট করা হয়েছে। এখনও তার রেজাল্ট আসেনি।


আরও মর্মান্তিক ঘটনা বাংলার শিবকান্ত রায়ের। কোচবিহারের বাসিন্দা শিবকান্তের ছেলে বিপুল বাড়ি ফিরছিলেন। জুনেই বিয়ে ছিল তাঁর। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নেয় বিপুলের। পিটিআইকে তাঁর বাবা শিবকান্ত বলেছেন, 'KIMS হাসপাতালে ছিল আমার ছেলের দেহ। আমি বালেশ্বর হাসপাতালে খুঁজছিলাম। পরে জানতে পারি KIMS-এ রয়েছে। ওরা বিহারের কাউকে সেই দেহ দিয়ে দিয়েছে, তাঁরা সৎকারও করে দিয়েছে।'


এরকমই অন্তত ৩৫ জন এখনও স্থানীয় গেস্ট হাউসে অপেক্ষা করছেন। আরও কেউ কেউ আপাতত বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, DNA-রিপোর্টের অপেক্ষা করে করে। এখনও একাধিক দেহের শনাক্তকরণ হয়নি। ভুবনেশ্বর AIIMS-এ ৮১টি দেহ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮৪ টি পরিবার তাঁদের DNA স্যাম্পেল দিয়েছে।


আরও পড়ুন: জীবনজুড়ে জঙ্গল, কলমজুড়ে প্রেম! টপ্পায় বুঁদ করতেন 'ঋজুদা' বুদ্ধদেব