কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: এবিপি আনন্দে খবর সম্প্রচারের পরেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল বৃদ্ধকে সাহায্য। বর্ধমান শহরের বাসিন্দা শেখ রবিউলকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি, দেওয়া হল খাদ্যসামগ্রী, পিপিই কিট। অ্যাম্বুল্যান্সের কালোবাজারির জেরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। 


আর্থিক অনটনের জেরে, চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন নিজের করোনা আক্রান্ত মাকে। আর তারপর থেকেই করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে ভ্যান নিয়ে ছুটে চলেছেন তিনি। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের শেখ রবিউল হক পেশায় রিকশাচালক। করোনা রুগিদের বাঁচাতে, তিন হাজার টাকা খরচ করে, নিজের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন, রিকশকে ভ্যানে পরিণত করেছেন। সেই ভ্যানের গায়ে পোষ্টার ও মোবাইল নম্বর লিখে শুরু করেছেন পরিষেবা। ফোন পেলেই, নিখরচায় ভ্যানে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা রোগীকে।


রবিউল জানিয়েছে, 'তারপর রোজার সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান নিজের মা। সেই সময় অ্যাম্বুলেন্স করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া  চাওয়া হয় তিন হাজার টাকা।  হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগে মারা যান মা।' 


পূর্ব বর্ধমান বাবুরবাগের রিকশ চালক শেখ রবিউল হক বলছেন, হাল ছাড়ব না, মাটি কামড়ে পড়ে থাকব, পিছিয়ে যাওয়ার লোক নই। ফোন এলে খুশি হই। দেখিয়ে দিতে চাই ৭০ বছরের বুড়ো কী না পারে। তাঁর মাথা গোঁজার আশ্রয় বলতে, অ্যাসবেস্টসের-চাল দেওয়া একটা মাটির ঘর। পরিবারে তিন সদস্য। রবিউল, স্ত্রী ও ছেলে। রোজগার এখন কিছুই নেই, চেয়েচিন্তে সংসার চলছে। তবে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বৃদ্ধ রবিউলের।


বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারাদিন ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ডাক পড়লেই ছুটে চলেন করোনা রোগীকে পৌঁছতে। সবমিলিয়ে বুড়ো হাড়ের ভেলকিই এখন সহায়, এলাকার গরিব করোনা আক্রান্তদের।


ফোন পেলেই, নিখরচায় হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা রোগীকে। করোনাকালে এক হতদরিদ্র রিকশচালকের মানবিকতার এই খবর সম্প্রচারিত হয় এবিপি আনন্দে।
এরপরই ৭০ বছরের শেখ রবিউলের পাশে দাঁড়ালেন তন্ময় দত্ত নামে কালীঘাটের বাসিন্দা এক স্বেচ্ছাসেবক।


কুর্নিশ জানানো হল এক বৃদ্ধের লড়াইকে। আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি, পিপিই কিট ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে ভবিষ্যতে যেকোনও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও করা হল।  করোনাকালে বড্ড অসহায় মানুষ। দুর্বিসহ এই অবস্থায় প্রয়োজন একটা সাহায্যের হাত। আর এই কঠিন সময়ে উজ্জ্বল মুখ রবিউলের মতো মানুষরা।