নয়াদিল্লি: পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের মতানৈক্যের খবর বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মানহানি মামলায় রাহুল গান্ধী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়, কার্যতই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিল বিরোধী শিবির (Rahul Gandhi)। মোদি পদবী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে চার বছর আগে মানহানির (অপরাধমূলক) মামলা হয় কংগ্রেস সাংসদ রাহুলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার তাতে বৃহস্পতিবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে গুজরাত আদালত। আপাতত ৩০ দিনের জামিন পেয়েছেন রাহুল। কিন্তু এ দিনের ঘটনায় রাহুলের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল আম আদমি পার্টি থেকে উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনাকে (Rahul Gandhi Defamation Case)।
এ দিন গুজরাতের সুরতের জেলা আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে দু'বছরের সাজা শোনায়। তার পরই একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন বিরোধীরা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal) ট্যুইটারে লেখেন, 'অবিজেপি নেতা এবং দলগুলিকে মামলা করে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। কংগ্রেসের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকতে পারে আমাদের। কিন্তু রাহুল গান্ধীজিকে এ ভাবে মানহানি মামলায় ফাঁসানো সঠিক নয়। জনতা এবং বিরোধী নেতাদের কাজই প্রশ্ন তোলা। আদালতকে সম্মান করি। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই'।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: ‘আমার কাছে ধর্ম হল...’ আদালতে দোষী সাব্যস্ত রাহুল মহাত্মার শরণে
উদ্ধবের শিবসেনা শিবিরের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি লেখেন, 'বিরোধী নেতাদের এ ভাবে লাগাতার নিশানা করার রীতির তীব্র নিন্দা করছি। বিচার বিভাগকে সম্মান জানিয়েই বলছি, রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্ত বাড়াবাড়ি এবং এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এ ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না, যাঁরা আম জনতার জন্য কথা বলেন, সরকারের পদলেহন করেন না'।
রাহুলের বোন, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও (Priyanka Gandhi Vadra) ট্যুইটারে প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁর কথায়, 'সরকার ভয় পেয়েছে। তাই যেনতেন প্রকারে রাহুল গান্ধীর কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। আমার দাদা কখনও ভীত হয়নি, কখনও হবেও না। সত্যের উপর নির্ভর করেই থেকেছে বরাবর, আগামী দিনেও সত্যই তুলে ধরবে। দেশবাসীর জন্য কথা বলে যাবে। সত্যের শক্তি এবং কোটি কোটি দেশবাসীর ভালবাসা ওর সঙ্গে রয়েছে'।
রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও। ট্যুইটারে হিন্দিতে লেখেন, 'কাপুরুষ, স্বৈরাচারী বিজেপি সরকার রাহুল গান্ধী এবং বিরোধীদে ভয় পেয়েছে। কারণ আমরা ওদের কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে দিচ্ছি। সংসদে যৌথ তদন্ত চাইছি। রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে মোদি সরকার। তাই ইডি পাঠায়, পুলিশ পাঠায়, বক্তৃতা নিয়ে মামলা দায়ের করে। উচ্চ আদালতে আবেদন জানাব আমরা'।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাফাল দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল। সেই সময় কর্নাটকের কোলারে প্রচারে গিয়ে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। নীরব মোদি থেকে ললিত মোদি, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়েও মন্তব্য করেন। সেখানে কটাক্ষের সুরে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, "কাকতালীয় ভাবে সব চোরেদের পদবী মোদি হয় কী করে?"
রাহুলের এই মন্তব্যেই বিতর্ক বাধে। দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাহুল আসলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন বলে দাবি করে বিজেপি। তাতে রাহুলের বিরুদ্ধে (অপরাধমূলক) মানহানির মামলা করেন গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেন্দু মোদি।পূর্ণেন্দুর অভিযোগ ছিল, গোটা মোদি সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন রাহুল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাতেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রাহুল। ৩০ দিনের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তার মধ্যে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে হবে।