নয়াদিল্লি: রাজ্যসভায় দুটি বিতর্কিত কৃষি বিল প্রবল হই-হট্টগোলের মধ্যেই ধ্বনিভোটে পাশ হওয়ার পরদিনই বেশ কয়েকটি বিরোধী দল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ চাইল। যে কায়দায় সরকারপক্ষ ‘নিজের এজেন্ডা অনুমোদন করিয়ে নিল’, তার তীব্র নিন্দা করে রাষ্ট্রপতিকে তারা আবেদন করেছে, তিনি যেন বিলদুটিতে সই না করেন। কংগ্রেস, বাম দলগুলি, এনসিপি, ডিএমকে, এসপি, তৃণমূল ও আরজেডি রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো স্মারকলিপিতে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। তিনি বিলে সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। সরকারের দাবি, কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংস্কার ঘটাতেই বিলদুটি আনা হয়েছে।
গতকাল সংসদের উচ্চকক্ষে বিলগুলিকে কেন্দ্র করে প্রবল হই-হট্টগোলের মধ্যেই বিরোধী শিবিরের কয়েকজন কোভিড-১৯ সতর্কতা বিধি উপেক্ষা করে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের দিকে ছুটে গিয়ে তাঁকে লক্ষ্য করে রুল বুক ছুঁড়ে মারেন, সরকারি নথিপত্র ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দেন। তাঁর মাইক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয়। বিলগুলি সিলেক্ট কমিটিতে রেফার করার প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি চেয়ে সরব হন বিরোধীরা। সূত্রের খবর, যে কায়দায় বিলগুলি রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেওয়া হল, সেটা বিজেপির হাতে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’, বলছে বিরোধী শিবির। সম্ভবত আগামীকাল বিরোধীরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন। বিরোধীদের স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিরোমনি অকালি দল নেতৃত্ব সোমবারই নাকি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে তাঁকে বিলে সই না করার আবেদন করবে বলে শোনা যাচ্ছে।
বিরোধীদের স্মারকলিপির খসড়া বানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। বিলগুলি কৃষক স্বার্থবিরোধী, কৃষকদের কর্পোরেটের দাস বানানোই তার অভিসন্ধি বলে দাবি বিরোধীদের। দেশের কৃষিব্য়বস্থার মৃত্যু ঘণ্টা বাজানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিরোধী নেতারা।
দি ফার্মার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল, ২০২০ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেওয়া মন্ডির বাইরে কৃষককে তার পণ্য বিক্রির স্বাধীনতা দেবে বলে দাবি সরকারের। সরকার বলছে, বিকল্প লেনদেনের রাস্তা রেখে কৃষকের ফসলের লাভজনক দর পাওয়ার সুবিধা করে দিতেই এটা করা হল। এই আইনে চাষিকে তার পণ্য বিক্রির জন্য কোনও সেস বা লেভি দিতে হবে না। আর দি ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল, ২০২০-র উদ্দেশ্য আগাম নির্ধারিত মূল্যে ভবিষ্যতে উত্পাদিত ফসল বিক্রির জন্য কৃষককে কৃষিপণ্য ব্যবসাকারী সংস্থা, প্রসেসর, পাইকারী ব্যবসায়ী, রপ্তানকারী বা বড় খুচরো কারবারীদের সঙ্গে চুক্তি করার স্বাধীনতা দেওয়া। বাজারের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি কৃষক থেকে স্পনসরদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া বিলের উদ্দেশ্য।