নয়াদিল্লি: পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে যদিও (Lok Sabha Elections 2024)। বিরোধী ঐক্যে এখনও ফাটল দৃশ্যমান। সেই আবহে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে (Mallikarjun Kharge)। নেতৃত্ব কোনও হাতিঘোড়া ব্যাপার নয়, একজোটে লড়াই করাই তাঁদের লক্ষ্য বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যখন আর বছর খানেক বাকি, সেই সময় তাঁর এই মন্তব্য একেবারেই হেলাফেলার নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যখন আর বছর খানেক বাকি
চেন্নাইয়ে এমকে স্ট্যালিনের জন্মদিনের সমারোহে উপস্থিত ছিলেন খড়্গে। ফারুখ আবদুল্লা, তেজস্বী যাদব-সহ বিজেপি বিরোধী শিবিরের আরও একাধিক নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই বক্তৃতা করতে গিয়ে সম্ভাব্য বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে মন্তব্য করলেন খড়্গে। তাঁর বক্তব্য, "প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করছি না আমরা। কে নেতৃত্ব দেবেন, তারও ঘোষণা করছি না। আমরা শুধু একজোটে লড়াই করতে চাই। বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে সমমনস্ক সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জোটের হাত মজবুত করতে হবে আমাদের।"
খড়্গের এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ ২০১৪ হোক বা ২০১৯, আগের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নে বরাবর নিজেদের এগিয়ে রেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজ্যে রাশ যত আলগা হয়েছে কংগ্রেসের, ততই তাদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী জোটের অন্দর থেকেও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন অনেকে। বরং কংগ্রেসের প্রতিযোগী হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে তৃণমূল, আম আদমি পার্টি, ভারত রাষ্ট্র সমিতির মতো দল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাহুল গান্ধীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি বিরোধী শিবিরের অন্দরে, বিশেষ করে ২০১৯-এর নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে রাহুল কংগ্রেসের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে। তাঁর জায়গায় মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে এসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কে চন্দ্রশেখর রাও। এমনকি ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন এবং সংযুক্ত জনতা দলের নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নামও শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: কোথায় মার্কসীয় দাড়ি, কোথায় অগোছালো চেহারা! কেমব্রিজে ‘ঝকঝকে’ রাহুল
সেই আবহেই সম্প্রতি ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। সেখানেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে। শনিবা অধিবেশনের শেষ দিন এ নিয়ে প্রস্তাবও পাস হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, নেতৃত্বের প্রশ্নে দলীয় নেতৃত্ব নীরব। বরং ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করা বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। নেতৃত্বের প্রশ্নে বিজেপি বিরোধী জোটে যাতে কোনও রকম বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি না হয়, তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির, নাকি রাহুল গান্ধীর, তা যদিও জানা যায়নি। তবে খড়্গের এই মন্তব্য ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ ২০১৯-এর পর রাহুলের রাজনৈতিক জীবন অস্তাচলে বলে যখন ধরেই নিয়েছিলেন সকলে, সেই সময় ধীর সুস্থে নিজেকে ঘষেমেজে নিতে সময় নিয়েছিলেন রাহুল। তার পর সম্পূর্ণ একার কাঁধে 'ভারত জোড়ো যাত্রা'কে সফল করে দেখিয়েছেন তিনি। আদানি প্রশ্নে সম্প্রতি সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারকে যে ভাবে প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ করেন তিনি, তার জন্যও ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার পরও কেন বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দাবি করছেন না রাহুল, জানতে কৌতূহলী অনেকেই। তবে কংগ্রেসের একাংশের মত, 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র সময়ই রাহুল জানিয়েছিলেন, সনাতনী, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সহিষ্ণু রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী তিনি। নেতৃত্ব বা পদ নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাঁর। রাহুল সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন।
সিদ্ধান্ত কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির, নাকি রাহুল গান্ধীর, তা যদিও জানা যায়নি
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নিয়ে সাম্প্রতিক কালে বিরোধী শিবিরে ফাটল ক্রমশ চওড়া হয়েছে। তৃণমূল, আপ, ভারত রাষ্ট্র সমিতি, এমনকি সমাজবাদী পার্টিও কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে। বিরোধী শিবিরে এমন মতানৈক্য়ে আরও বলীয়ান হয়ে উঠেছে বিজেপি। তাই বিরোধী ঐক্যের জন্যই নেতৃত্বের প্রশ্নে একধাপ পিছিয়ে আসছে কংগ্রেস।