গত রবিবার ৯২ বছর বয়সে মুম্বইয়ে প্রয়াত হয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।  ভারতের জনপ্রিয়তম কন্ঠশিল্পী তিনি, এ নিয়ে কখনও প্রশ্ন ছিল না। তাঁর জনপ্রিয়তা কতটা তা আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তিনি এতটা জনপ্রিয় কেন, তা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। বিষয়টি আমি প্রবন্ধের দ্বিতীয়ার্ধে আলোচনা করব। নিশ্চিতভাবে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে লতার সমকক্ষ কখনও কেউ ছিলেন না। যদিও কখনও কখনও এক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয় যে, তাঁর বোন আশা ভোঁসলে অনন্ত একটা সময় নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন। আর পুরুষ প্লেব্যাক সিঙ্গারদের মধ্যে মহম্মদ রফি সম্ভবত জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। লতা যদি ‘মেলোডি কুইন’ হয়ে থাকেন, তাহলে রফি ‘মেলোডি কিং’। 


কিন্তু বয়সের দিক থেকে রফি সাহেবের তুলনায় লতা কিছুটা সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন। রফি সাহেবের যখন মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৫৫।   আশারও অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর এবং অনেকেই দাবি করেন, দিদির তুলনায় তাঁর প্রতিভা অনেক বহুমুখী। আশার তুলনায় লতা সঙ্গতভাবেই অনেক বেশি জনপ্রিয় কিনা, এই প্রশ্ন ছাড়াও এই বিতর্ক সম্ভবত অন্তহীন হয়ে থাকবে এবং তা বরং  পক্ষপাতিত্ব নিয়ে যাঁরা আগ্রহী এবং  যাঁদের অন্যদের উপর তাদের আবেগপূর্ণ মতামত চাপানোর সময় ও প্রবণতা আছে, তাঁদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া ভালো। 


লতার জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য হিসেবে সংবাদমাধ্যমে তাঁর প্রয়াণের পর থেকেই তাঁর অতুলনীয় গানের সম্ভারের উল্লেখ করছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি ৩৬ টি ভাষায় গান করেছেন। অন্যরা  ১৫-২০ টির উল্লেখ করেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। খুব ভালো প্রশিক্ষণ না থাকলে বেশিরভাগই একটি ভাষায় ভালো গান গাইতে পারেন না, এ কথা বিবেচনা করলে কিছু মুষ্টিমেয় ভাষা তাঁর অতুলনীয় উপহারের বিষয়টি উল্লেখের জন্য যথেষ্ট। 


লতা বিস্ময়করভাবে এত গান গেয়েছেন, প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য ও সামাজিক মাধ্যমে চিন্তাভাবনা ও ভাবাবেগের বহত্তর বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিই অঙ্গীভূত হয়ে ওঠে। কেউ কেউ বলেছেন, লতা ২৫ থেকে ৩০ হাজার গান গেয়েছেন এবং অনেকটা পিছিয়ে ২০০৪ সালে লতার ৭৫ তম জন্মদিনে বিবিসি-তে এক নিবন্ধে যশ চোপড়া উল্লেখ করেছিলেন ‘৫০,০০০ গান’। নিউইয়র্ক টাইমসের শ্রদ্ধার্ঘে লতার গাওয়া ‘হাজার হাজার গানে’র কথা বলা হয়েছে। গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে একের পর এক রেকর্ডে সামিল হওয়া নিয়ে ভারতীয়দের  আগ্রহ বহুদিনের। ১৯৭৪ সালে সঙ্গীতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেকর্ডেড শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন লতা। বহু ভারতীয়দের কাছেই তা ছিল গর্বের ব্যাপার। যদিও এই দাবি মহম্মদ রফির দ্বারা বিতর্কিত ছিল। কীভাবে এই বিতর্ক মোকাবিলা করা হল, তা একটা দীর্ঘ কাহিনী। কিন্তু ২০১১-তে গিনেস বুক সবচেয়ে বেশি গানের ‘সিঙ্গল স্টুডিও রেকর্ডিংস’-এর বিশ্বরেকর্ড আশা ভোঁসলের রয়েছে বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল।  কোনও বোনের কাছেই আজ আর সেই রেকর্ড নেই। ২০১৬-তে সেই রেকর্ড গিয়েছে পুলাপাকা সুশীলা মোহনের কাছে। তিনি তেলগু সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী। যদিও তিনি তামিল সহ অন্যান্য ভাষাতেও গান গেয়েছেন। 


 রেকর্ডের প্রতি ভারতীয়দের আসক্তি ও পরিসংখ্যাণের ভরকেন্দ্র বলার অপেক্ষা রাখে না। এক্ষেত্রে সিনেমার গানের অনুরাগীদের ক্ষেত্রেও সেই সংখ্যা প্রচুর।এর পরিপ্রেক্ষিতে লতা ঠিক কত গান গেয়েছেন, তা প্রকৃতপক্ষে যে কেউ জানেন না, তা খুবই বিস্ময়কর মনে হতে পারে।   তবে অন্যান্য বিষয়েও তাঁকে 'ভারতের নাইটিঙ্গেল' হিসেবে ব্যাপক অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু জিজ্ঞাসা ও  মনোরম বিস্ময় আছে। ভারতে ৬০-এর দশকে বড় হয়ে ওঠার সময় স্কুলের জিকে (সাধারণ গান) বইয়ে নিশ্চিত করা হত যে, যেন আমরা জানি ‘পঞ্জাবের বাঘ’ ছিলেন লাজপত রায়, সীমান্ত গাঁধী হলেন খান আব্দুল গফফর খান, দেশবন্ধু সিআর দাশ- এবং ভারতের নাইটিঙ্গেল সরোজিনী নাইডু, লতা মঙ্গেশকর নন। সরজিনী নাইডু অবশ্যই দুরন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী, গাঁধীজীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর ছিলেন সংযুক্ত প্রদেশের রাজ্যপাল। এর পাশাপাশি তিনি যে সুদক্ষ কবি, তা খুব বেশি জানা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে একাধিক ইংরেজি লেখক তাঁকে ইংরেজি ভারতের সেরা কবি হিসেবে স্বীকার করেছেন। সরোজিনী নাইডু যদিও কন্ঠশিল্পী ছিলেন না। তাঁর কবিতায় ভাবনার বহিঃপ্রকাশ, গীতিমূলকতা ও আবেগপূর্ণ গুণের জন্য় মোহনদাস গাঁধীর কাছ থেকে ভারত কোকিলা অভিধা অর্জন করেছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে গাঁধী ইংরেজি প্রথা অনুসরণ করেছিলেন, যেখানে সাহিত্য ও কবিতার সঙ্গে নাইটিঙ্গেলের সুনিবিড় যোগ ছিল। ইংরেজ রোমান্টিক কবিরা বিশেষ করে, নাইটিঙ্গলকে নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জন কিটস, যাঁর অড টু অ্যা নাইটিঙ্গল ইংরেজি কবিতার ক্লাসের একটা প্রধান কবিতা হয়ে রয়েছে। সম্ভবত এই কবিতাই  লতার উদাত্ত কণ্ঠমাধুর্যকে কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতীয় জনসমাজের মনোভাবে বিস্তার পেয়েছে..


Thou was not born for death, immortal Bird!
No hungry generations tread thee down;
The voice I hear this passing night was heard
In ancient days by emperor and clown . . .


তাঁর বন্ধু তথা সমসাময়িক পার্সি বিসি শেলি তাঁর বিখ্যাত ডিফেন্স অফ পোয়েট্রি-তে নাইটিঙ্গেল ও কবি যে সমগ্র বিশ্বকেই প্রভাবিত করে, সে সম্পর্কে কোনও সংশয় পোষণ করেননি। 


 ‘A Poet is a nightingale, who sits in darkness and sings to cheer its own solitude with sweet sounds; his auditors are as men entranced by the melody of an unseen musician, who feel that they are moved and softened, yet know not whence or why.’ গাঁধী জানতেন যে, নাইটিঙ্গেল ভারতীয় পাখি নয়। তাই তিনি সরোজিনী নাইডুকে ‘কোকিলা’ শব্দের মাধ্যমে  উল্লেখ করেছিলেন, যার সাজুয্য রয়েছে নাইটিঙ্গেলের সঙ্গে। আরও স্পষ্টভাবে বললে, ভারতে কতিপয়ই এ সব ব্যাপারের পরোয়া করেন যে, শুধু মাত্র পুরুষ নাইটিঙ্গেলই গান করতে পারে। স্ত্রী নাইটিঙ্গেলরা গান করে না, পুরুষ নাইটিঙ্গেল, যাদের একটি বিস্তৃত ও এক হাজারের বেশি ভিন্ন ভিন্ন শব্দের সম্ভার রয়েছে। এক্ষেত্রে তুলনায় ব্ল্যাকবার্ডের রয়েছে প্রায় ১০০- দ্য বিটলসে এই পাখির উল্লেখ রয়েছে-এই পংক্তিগুলির মাধ্যমে-


 ‘Blackbird singing in the dead of night / Take these broken
wings and learn to fly’—  স্ত্রী-পাখিদের জন্য এই গান, আর তাও প্রধানত রাতে।
    
এরপরও লতার জনপ্রিয়তার পরিমাপ করতে চাইলে আরও একটি প্রশ্ন বোধগম্য হওয়া বাকি রয়েছে। কোন জিনিস তাঁকে এত জনপ্রিয় করে তুলল যে, তিনি বাস্তবিক অর্থেই দেশে কণ্ঠ হয়ে উঠলেন এবং কয়েক দশক ধরে তিনি কীভাবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেন? অনেকের কাছেই উত্তরটা স্পষ্ট- তাঁর কন্ঠ ছিল সোনালি। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, তাঁর গায়কি ছিল নিঁখুত, সুর একেবারে সঠিক; তাঁর গায়কিতে, অসাধারণভাবে ভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বলেও দাবি করা হয় এবং যে অভিনেত্রীর জন্য গাইছেন, তাঁর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। 


তাঁর জীবনীকার নাসরিন মুন্নি কবীর জানিয়েছেন, গানের ভাব ও শব্দের অর্থ ধরে নেওয়ার অদ্ভূত প্রদত্ত ক্ষমতা ছিল। লতার সংকল্প ও দৃঢ়তা ছিল, এবং শৃঙ্খলাবোধও। ১৯৪০-এর দশকের শেষ পর্ব থেকে ১৯৬০-এর দশকে সিনেমায় গান গাইতে উর্দু জানা দরকার ছিল। লতাকে এই ভাষাও শিখতে হয়েছে। একটা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে যে., দিলীপ কুমার লতার উর্দু নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। লতা তাঁর উর্দু উচ্চারণ নিয়ে পরিশ্রম করেন, আর তাও এতটা যে, তা উঠে এসেছে জাভেদ আখতারের সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে, যেখানে তিনি বলেছেন যে, তিনি লতার মুখে কোনও উর্দু উচ্চারণে ভুল শোনেননি। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন যে, এগুলির কোনওটিই লতার সঙ্গে যে ম্যাজিক জড়িয়ে রয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, প্রথমবার লিরিক পাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে এবং গানটি আগে না শোনার পরও লতা ওই গান আয়ত্ত করে নিতে পারেন।  লতা যে অন্য গুণাবলীর অধিকারিণী ছিলেন, তা ছিল একান্তভাবে তাঁর নিজস্ব।  জাভেদ আখতার তাঁর গানের অন্তর্নিহিত অর্থ অনুধাবন, শব্দের আড়ালে থাকা গানের অর্থ  বুঝে নেওয়ার গুণাবলীরও উল্লেখ করেছেন। 


এমনকী এসবের উর্ধ্বেও, আমি বরং বলব, দেশের হার্টথ্রব হয়ে উঠতে লতা মঙ্গেশকরকে সাহায্য করেছে অন্যকিছু। যেন এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশের জাতীয় পটচিত্রে প্রবলভাবে উঠে এসেছিলেন তিনি। ১৯৪৯-এ। নানা ছবিতে নিজের উপস্থিতি প্রবলভাবে ব্যক্ত করেছিলেন। যেগুলির মধ্যে বেশকিছু হিট হয়েছিল : মহল, বরসাত, আন্দাজ়, বাজ়ার, দুলারি এবং পতঙ্গ। যে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ তাঁকে দেশে ঝড় তুলতে দেখেছিল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  দেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭-এ। এবং তারপর থেকে যে প্রশ্নগুলি দেশের আশুকর্তব্যের মধ্যে পড়েছিল তা হল মহিলাদের মর্যাদা রক্ষার বিষয়। ১৯২০-২২ গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিলেন মহিলারা। এবং লবণ সত্যাগ্রহ ও তৎপরবর্তী অন্যান্য আন্দোলনে মহিলাদের যোগদানের ট্রেন্ড ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু, বাকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা জন-সমাবেশের অংশ হতে পারতেন না। দেশের সংবিধান সমাজে মহিলাদের পুরুষদের সমান মর্যাদা দেওয়ার কথা বললেও, চলতি সেন্টিমেন্ট কিন্তু তা বলত না। ঘরোয়া ক্ষেত্রেই মহিলাদের দেখত সেই সেন্টিমেন্ট। একটা উদাহরণ তুলে ধরা যাক। তেলঙ্গানা বিদ্রোহে (১৯৪৬-৫১) মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিলেও, লেখাজোখায় প্রকাশ, তাদেরই পুরুষ সহযোদ্ধারা চাইতেন, মহিলাদের রাইফেল ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধশেষে রান্নাঘরে ফিরে যাওয়াই শ্রেয়।


একই সময়ে, দেশমাতৃকার জন্য সেবায় ও বলিদানের ব্রত নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম সংঘবদ্ধ হয়ে উঠেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন গড়ে উঠেছিল নারীবাদী সত্তা-নির্ভর দেশ, ভারতে কিন্তু নানা কারণে সে সাধারণ কারণের ঊর্ধ্বে উঠে সেই অনুনাদ ধ্বনিত হয়েছিল। আব্রাহামবাদে না হলেও  হিন্দুত্ববাদে নারীবাদী সত্তার জন্য স্থান এখনও বর্তমান। দেশের প্রায় সমস্ত প্রান্তে এখনও পূজিতা হন দেবী। ১৯২০ সাল থেকে স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত ভারতমাতার আবাহনে ব্যাপ্ত ছিল ভারতীয় শিল্পকলা। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ভারতমাতার ছন্দকে দিতে হত এক নবরূপ। ভাগ্যক্রমে, দেশ পেল লতাকে। নারীবাদী নীতির ধারণার যেন প্রতিভূ তিনি। লতা পূর্ববর্তী সময়ের গায়িকাদের যেখানে ভারী, প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষীণ, প্রায় পুরুষ-সম গলা শোনা গিয়েছে, মলিকা পুখরাজ এবং জোহরাবাই আমবালাওয়ালিদের মতো- লতা মঙ্গেশকর সেখানে শুরু করেন এমন এক গলার সাহায্যে, তা যেন অমৃতকণ্ঠী। প্রথম ছবি মহালে (১৯৪৯)  লতা ও জোহরাবাই - প্রথমবার একসঙ্গে গেয়েছিলেন। প্রায় দুজনেরই কোনও উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব তুলে ধরা হয়নি। লতা গেয়েছিলেন "আয়েগা আয়েগা আনেওয়ালা।" যা প্রায় সবাইকে মোহিত করে দিয়েছিল। ইয়ে রাত ফির না আয়েগি গেয়েছিলেন জোহরাবাই। লতা মঙ্গেশকরের গলা ছিল বড় ঘরোয়া, বড় আপন। পাশাপাশি তা দেশের নৈতিকতারও যেন ধারক এবং বাহকও। এটাই তাঁকে অন্যদের থেকে এগিয়ে দিয়েছিল অনেকটা।


হিন্দি ছবির গান নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মতানৈক্য হয়েছে। তবে লতা এবং আশা ভোঁসলেকে যাঁরা একসঙ্গে শুনেছেন, তাঁরা জানেন, শৈল্পিক কক্ষপথে দুই বোনের পার্থক্য রয়েছে। 


একটা মৌলিক বিষয়ে সহমত হয়তো হবেন অনেকে, যে লতা মঙ্গেশকরের গানে রয়েছে একধরণের নারীসত্তার প্রতি আওয়াজ, যা তাঁকে অন্যমাত্রায় বসিয়েছে। যদি লতা মঙ্গেশকরের গানে আরও বেশি করে আত্মার উপস্থিতি, আশাজির গানে শারীরিক উপস্থিতি বেশি যা ক্ষরিত হয়েছে এক ধরণের যৌন সংবেদনশীলতায়। আংশিকভাবে আশাজি গান গেয়েছেন, সেসব অভিনেত্রীদের জন্য, যাঁরা পর্দায় তাদের শরীরী আবেদনকে কখনও কখনও প্রতিভাত ধরেছেন। এটা সাধারণ কথা যে লতা মঙ্গেশকর চটকদার গান গাননি, তবে আশাজির ক্ষেত্রে বিষয়টি লতাজির মতো নয়। শরীরী-অনুভবের ছোঁয়া ছিল তাঁর গানে। মহিলাসুলভ যে বিষয়টি আশা ভোঁসলের গানে উঠে এসেছে, তা কখনও শরীরী সংবেদনশীলতার দিকে ইঙ্গিত করেছে।


সহজ কথায় বলতে গেলে লতার জনপ্রিয়তার উৎস শুধু নিখুঁত সুর, ত্রুটিহীন উচ্চারণ, অভিব্যক্তিপূর্ণ আন্তরিক গায়কি ও  কথার ঊর্ধ্বে থাকা প্রতিটি গানের মেজাজ বুঝে নেওয়ার মতো একটি প্রতিভাই নয়, সেইসঙ্গে বাস্তবে জাতির প্রায় সূচনা লগ্নে নারীসত্ত্বার ধারনাকে মূর্ত করে তুলতে তিনি এসেছিলেন।  সর্বোপরি, 'আশা দিদি' নিয়ে কেউ কথা বলে না। লতা দিদি ভারতে এবং ভারত-জুড়ে যে জাদুকরী মুগ্ধতা তৈরি করে গিয়েছেন, তা বুঝতে এখনও অনেক কাজ করতে হবে।


(বিশেষ দ্রষ্টব্য - উপরিউক্ত লেখাটির পরিসংখ্যান, দাবি ও  মতামত লেখকের নিজস্ব। এবিপি লাইভের সম্পাদকীয় কোনওরকম প্রভাব এতে নেই। লেখাটির বিষয়ে এবিপি কোনওরকম মত পোষণ করে না।)