সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: করোনাকালে ভারতের ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় যখন কমেছে, তখন ধনকুবেরের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন চল্লিশজন।এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে অক্সফ্যামের রিপোর্টে। যেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষাখাতে যখন বরাদ্দ কমাতে হয়েছে, তখন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ধনকুবেরদের সম্পত্তি।
করোনাকালে ভারতে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। আর ধনীরা আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। অক্সফ্যামের বার্ষিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। গত দু’বছরে করোনা এবং লকডাউনের ধাক্কায় বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে, পরিবার নিয়ে পথে বসেছেন। রোজগেরে সদস্য করোনায় প্রাণ হারানোয়, অনেক পরিবার কার্যত ভেসে গেছে। অনেকের বেতনে কোপ পড়েছে।
কিন্তু, এই মুদ্রার একটা অন্যপিঠও রয়েছে, যা চমকে দেওয়ার মতো! অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১-এ ভারতের ৮৪ শতাংশ পরিবারের আয় যখন কমেছে...ঠিক সেই সময়েই ভারতে ধনকুবেরের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন আরও ৪০ জন। যার ফলে ভারতে ধনকুবেরের সংখ্যা ১০২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪২।
আরও পড়ুন, করোনাকালেও এগোচ্ছে দেশ, ভ্যাকসিন দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ভারত: নরেন্দ্র মোদি
সুইৎজারল্যান্ডের দাভোসে, ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক বৈঠকের আগে বিভিন্ন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে এই রিপোর্ট প্রকাশ করে অক্সফ্যাম। তাদের এবারের রিপোর্টের শিরোনাম- Inequality Kills। রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে, বৈষম্যের ছবিটা। অক্সফ্যামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ধনীতম ৯৮ জনের কাছে যত সম্পত্তি আছে সেটা দেশের দরিদ্রতম সাড়ে ৫৫ কোটি মানুষের মিলিত সম্পত্তির সমান।
অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে চরম দারিদ্রের গ্রাসে পড়েছেন ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ভারতীয়। উল্টোদিকে, ২০২০’র মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর অবধি ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পত্তির পরিমাণ ২৩.১৪ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩.১৬ লক্ষ কোটি। অর্থনীতিবিদ শৈবাল কর বলেন, "সরকারের তরফে গাফিলতি আছে। বৈষম্য দূর করার জন্য কিছু করেনি। লোন দিয়ে কিছু হবে না। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।"
অক্সফ্যামের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, "ভারতের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার যখন প্রায় ১৫ শতাংশে পৌঁছে যায় তখনই ২০২১ সালে ভারতে ধনকুবেরের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।" এই রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনাকালে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে যখন দেশের স্বাস্থ্যবাজেটে ১০ শতাংশ এবং শিক্ষাখাতে ৬ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটাই করা হয়েছিল... তখন ২০২১-এ ভারতের ১০০জন ধনীতম ব্যক্তির সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭.৩ লক্ষ কোটি টাকা। যা কিনা রেকর্ড!
অক্সফ্যামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ৯৮ জন ধনকুবেরের সম্পত্তির ওপর ৪ শতাংশ কর বসালে, তার থেকে যা আয় হবে, তাতে ১৭ বছর মিড ডে মিল প্রকল্প চালানো যাবে। আর অন্তত এক শতাংশ সম্পত্তি কর নিলে, তা দিয়েও স্কুল শিক্ষা কিংবা আয়ুষ্মান ভারত--- যে কোনও একটি প্রকল্প চালানোর খরচ উঠে আসবে।