ইসলামাবাদ: প্রয়াত ঋষি কপূরকে শোকে, শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে পাকিস্তানেও। বেশ কিছুদিন ক্যান্সারে ভুগে গত বৃহস্পতিবার মারা গিয়েছেন কপূর পরিবারের সদস্য এই জনপ্রিয় অভিনেতা। ঘটনাচক্রে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বিরাট ভূমিকা পালন করা এই পরিবারের শিকড় ওয়াগার ওপারে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারের কিসা খাওয়ানি বাজারে। সেখানে তাদের বাড়ির নামই ছিল 'কপূর হাভেলি'। দেশভাগের জেরে তারা এপারে চলে আসেন। ঋষির অনুরোধ মেনে ২০১৮-য় পাকিস্তান সরকার সেই বাড়িটি মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে প্রয়াত অভিনেতার পৈত্রিক ভিটেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেনি ইমরান খান সরকার।


১৯৯০ সালে ভাই রণধীর কপূরকে নিয়ে বাপ-ঠাকুর্দার ভিটে দেখতে গিয়েছিলেন ঋষি। ওখানেই জন্ম হয়েছিল তাঁর দাদু পৃথ্বীরাজ, বাবা রাজ কপূরের। পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ঋষিকে ওই বাড়িতে পাক সরকার সংগ্রহশালা বানাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮-র জুলাইয়ে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তাদের সরকার ‘কপূর হাভেলি’কে সংগ্রহশালার মর্যাদা দেবে বলে কথা দেন ফেডেরাল মন্ত্রী শাহরিয়ার আফ্রিদিও। কিন্তু ২ বছর কেটে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। খাইবার পাখতুনখোয়ার হেরিটেজ দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, তারা একটি সামগ্রিক প্ল্যানও বানিয়েছিল, যাতে ঠিক হয়, ওই বাড়ির সামনের দিকটা অক্ষত রেখে ভিতরের অংশগুলি সারিয়ে সংস্কার করা হবে। কিন্তু টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা এগোয়নি।
বর্তমানে ওই বাড়ি একজনের সম্পত্তি। অতীতে তিন-চারবার বাড়িটি তিনি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিলেও তাঁর বিরুদ্ধে হেরিটেজ দপ্তর এফআইআর দায়ের করায় তাঁকে পিছু হটতে হয়েছে। তিনি সরকারকে ভরসা দিয়েছেন, বাড়িটি ভাঙবেন না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ঝড়বৃষ্টি, ভূমিকম্পের জেরে বাড়ির ভিতরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে।
বাড়িটি তৈরি হয়েছিল পৃথ্বিরাজ কপূরের বাবা বসেওয়ারনাথ কপূরের হাতে।
ঋষির প্রয়াণের খবরে পেশোয়ারেও শোকের ছায়া নেমেছে। ঋষিকে কোনওদিন চাক্ষুষ দেখেননি, তাঁর নাম-ডাক শুনেছেন, এমন অনেকেই কপূর হাভেলিতে জড়ো হন। পারভেজ আহমেদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ঋষি কপূরের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই আমাদের, কিন্তু ছোটবেলা থেকে ছবির নায়ক হিসাবে ওঁর সিনেমা দেখেছি, আর যেখানে আমারও জন্ম, সেই জায়গার সঙ্গে ওঁর সম্পর্কের সূত্রে একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ঋষির মৃত্যুতে। স্থানীয় ইতিহাসবিদ ইব্রাহিম জিয়া বললেন, ঋষির জীবনাবসানে পারভেজের এই অনুভব পেশোয়ারের সব মানুষেরই মনের কথা।