নয়াদিল্লি: খাদ্যপণ্যের মূল্য আকাছোঁয়া হতেই সঙ্কটের ইঙ্গিত মিলেছিল। এখনও পর্যন্ত যদিও রাখঢাকের নীতি নিয়ে চলছে তারা। তবে খোদ মন্ত্রীই এ বার পাকিস্তানের বিপন্ন অবস্থার কথা ফাঁস করে দিলেন। জানালেন, দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে পাতিস্তান। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কাছ থেকে যে ৭০০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা ছিল, তার সম্ভাবনাও এখন বিশ বাঁও জলে।
রবিবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা আসিফ এমনই মন্তব্য করেন। নিজের জন্মভূমি সিয়ালকোটেক একটি সভায় সত্যতা স্বীকার করে নেন তিনি। দেশের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী এবং আমলাতন্ত্রকেই দোষারোপ করেন তিনি। তাঁদের জন্যই আজ দেশ ঘোর সঙ্কটে বলে দাবি করেন প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে।
প্রকাশ্য় সভায় এ দিন আসিফ বলেন, "পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছে বলে নিশ্চয়ই শুনেছেন আপনারা! অথবা পাকিস্তানের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে! আসল কথা বল, সেটা ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে। আমরা একটি দেউলিয়া দেশে বাস করছি। তবে আমাদের যাবতীয় সমস্যাকর সমাধান এই দেশেই নিহিত রয়েছে।" আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কাছে পাকিস্তানের সমস্যার সমাধান নেই বলে মন্তব্য করেন আসিফ।
আসিফের মতে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী প্রত্যেকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আমলাতন্ত্র এবং রাজনৈতিক নেতারা। অর্থনীতির এই ঘোর সঙ্কটের জন্য এঁদেরকেই দায়ী করা উচিত। আইনের শাসন কায়েম নেই পাকিস্তানে, কেউ সংবিধান মেনে চলেন না বলেও অভিযোগ করেন আসিফ। বিগত ৩২ বছর ধরে রাজনীতির মান ক্রমশ নিচে গিয়েছে বলেও দাবি করেন।
মুদ্রাস্ফীতি, সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ার শূন্য হতে চলা পাকিস্তানে বেশ কিছু ধরেই পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। শুধু তাই নয়, বিপুল পরিমাণ ঋণও রয়েছে তাদের কাঁধে। গত কয়েক মাসে একের পর এক তাবড় সংস্থা পাকিস্তানে কাজকর্ম বন্ধ রেখেছে। সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার অভাবে কাঁচামালের জোগান নেই বলেই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেখানে।
এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে অক্ষম পাকিস্তান। বিভিন্ন বন্দরে সারি সারি কন্টেনার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা হারানোর পথে। বিগত অর্ধ শতকে এই প্রথম পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতিও ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছেছে। এত দ্রুত তার গতি যে নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্রও কেনার সাধ্য নেই সাধারণ মানুষের।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই মুদ্রাস্ফীতির গড় হার ৩৩ শতাংশ। সেই পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তানকে বার করে আনতে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের সাহায্যও যথেষ্ট হবে না বলে মত অর্থনীতিবিদদের। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের সঙ্গে পাকিস্তানের আলোচনা ভেস্তে গিয়েছে।
তাতে এই মুহূর্তে পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। একলিটার দুধের দাম সেখানে ২৫০ টাকায় এসে ঠেকেছে। ৭৫০ টাকা দাম পড়ছে এক কেজি মুরগির মাংসের। তবে টাকা ফেললেই যে পণ্য মিলছে, তা-ও নয়। দেশে মজুত সামগ্রীও তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে।