নয়াদিল্লি: ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলতে নতুন পরিকল্পনা পাকিস্তানের। আরব সাগরে বন্দর গড়তে চাইছে তারা। আর সেই প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি আমেরিকার দ্বারস্থ হয়েছে তারা। আমেরিকা সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সেই মর্মে প্রস্তাবও জমা দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। (Pakistan Proposes Port on Arabian Sea)
ফাইনান্সিয়াল টাইমস বিষয়টি সামনে এনেছে। পাকিস্তান বন্দরের নীল নকশাও জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আরব সাগরের বুকে ওই বন্দরটি গড়ে তোলা এবং সেটি পরিচালনার জন্য আমেরিকা থেকে বিনিয়োগ চাইছে পাকিস্তান সরকার। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, বালুচিস্তানের গ্বোয়াদর জেলার পাসনি শহরের কাছাকাছি জায়গায় বন্দরটি গড়ে তুলতে আগ্রহী পাকিস্তান। পাসনি একটি বন্দর-শহর, যা কি না আফগানিস্তান এবং ইরানের মধ্যেকার সীমান্ত শহরও। (US Pakistan Relations)
সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আমেরিকা সফরে তাঁর সঙ্গী হন মুনিরও। হোয়াইট হাউসে তাঁদের বৈঠক হয়, যেখানে পাকিস্তানের কৃষি, প্রযুক্তি, খনি ও বিভিন্ন শক্তি প্রকল্পে আমেরিকার সংস্থাগুলির বিনিয়োগ চেয়ে আর্জি জানান শেহবাজ। ট্রাম্প সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হয় তাঁদের। তাঁদের হাতেও প্রস্তাবিত বন্দরের নীল নকশা তুলে দেওয়া হয় বলে খবর।
আরব সাগরে পাকিস্তান যে বন্দর গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে, পুরোপুরি বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করা হবে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই বন্দরটি সামরিক স্বার্থে ব্যবহার করবে না আমেরিকা। বরং খনিজে সমৃদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে রেলপথে সংযোগ গড়ে তোলার কথা বলা রয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তরফে এ নিয়ে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের পাশাপাশি আমেরিকার বিদেশ বিভাগ এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পাকিস্তানি সেনাও এ নিয়ে কিছু জানায়নি এখনও পর্যন্ত। তবে পাকিস্তানের এই প্রস্তাব ভারতের জন্য যথেষ্ট চিন্তার। ট্রাম্প এবং তাঁর সরকার আরব সাগরে বন্দর গড়া নিয়ে কী আবস্থান নেন তা-ও দেখার।
তবে বিষয়টি ভালভাবে দেখছেন না কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মসনদে ফেরার পর থেকে ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সমীকরণে পরিবর্তন চোখে পড়ছে। মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঠিক আগেই পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। গত মাসে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং আরও একাধিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।
এমনকি গত ছ’বছরে শেহবাজই পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে হোয়াউট হাউসে আপ্যায়ন করা হয়। জুন মাসে মুনিরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎও সারেন ট্রাম্প। ভারতের উপর যেখানে দুই দফায় ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি, সেখানে পাকিস্তানের উপর শুল্ক চাপিয়েছেন মাত্র ১৯ শতাংশ। পাকিস্তানে তৈল ভাণ্ডারও গড়তে চলেছে আমেরিকা। পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যও বেড়েছে আগের তুলনায়। সেই আবহে আরব সাগরে, ভারতের নাকের ডগায় বন্দর গড়ার এই প্রস্তাব দিল পাকিস্তান, যাতে দিল্লির উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।