নয়াদিল্লি: ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার 'জবাবে' আকাশপথে 'রেড' শুরু পাকিস্তানের (Pakistan Air Raid In Iran)। সূত্রের খবর, ইরানের জমিতে জঙ্গিঘাঁটি নিশানা করে আকাশপথে অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তান। ইরানের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই হামলায় ৪ শিশু-সহ ৯ জনের প্রাণ যায়। গত কাল, বুধবার, পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা স্বীকার করে ইরান। ক্ষুব্ধ পাকিস্তান জানায়, এই ধরনের হামলা 'আইনবিরুদ্ধ'। 'গুরুতর পরিণাম'-র হুঁশিয়ারিও দেয় তারা। তার পরই এদিনের হামলার খবর।


কী জানা গেল?
সূত্রের খবর, পাক বায়ুসেনা ইরানের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শিবিরে হামলা চালায়। ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশের গভর্নর জেনারেল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্বের শহর সারাভান দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখবে বলে জানায়। যদিও সূত্রের খবর, এর নেপথ্য়ে রয়েছে পাকিস্তান। পরে পাক বিদেশমন্ত্রক জানায়, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইরানের সিস্তান-বালোচিস্তান প্রদেশের 'সন্ত্রাসবাদীদের' শিবিরে হামলা চালানো হয়েছে। একই বিবৃতিতে ইরানকে 'মিত্র দেশ' হিসেবে সম্বোধন করে পাক বিদেশমন্ত্রকের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক কোনও কিছুকেই যে তারা মানবে না, সে কথা আরও একবার বুঝিয়ে দিতেই এই হামলা।
 বুধবার পাক জমিতে ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছিল তার কড়া প্রতিবাদ করে 'গুরুতর পরিণামের' হুঁশিয়ারি দেয় পাকিস্তান। বালোচিস্তান প্রদেশে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হানায় দুই শিশুর প্রাণ যায়, জখম হন ৩ জন। কোনও ধরনের উস্কানি ছাড়াই এই হামলা, অভিযোগ করে পাকিস্তান। গত কালই কড়া কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানায় তারা। ইরানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ফেরত আনা হয়। ইরানের রাষ্ট্রদূতের পাকিস্তানে ফেরার উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়। তার ঠিক পর দিন ইসলামাবাদের এই হামলা আন্তর্জাতিক পরিসরে নানা প্রশ্ন তুলছে।
এমনিতেই ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষের জেরে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি টলোমলো। তার উপর, আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো পশ্চিমি দেশগুলির সংঘাতে যোগদান উদ্বেগ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চের। ইয়েমেনের ইরান-পন্থী হুথিদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে আমেরিকা-ব্রিটেন। জবাবে কড়া অবস্থানের হুঁশিয়ারি দেয় ইয়েমেনের হুথিরা। এবার ইরান-পাকিস্তানের সংঘাত।


ভারতের প্রতিক্রিয়া..
'দু'দেশের ব্যাপার', পাকিস্তানের মাটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানা নিয়ে এমনই মনে করে ভারত। তবে সে সঙ্গে বিদেশমন্ত্রক মনে করিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে বিশ্বাসী নয়াদিল্লি। তারা এটাও বোঝে, কোনও দেশ আত্মরক্ষার তাগিদ থেকে ঠিক কী কী ধরনের  করতে পারে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির এই মন্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়ওয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, 'এটি ইরান ও পাকিস্তানের বিষয়। তবে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে জানতে চাইলে বলব, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে আমাদের আপসহীন জিরো টলারেন্স নীতি কায়েম রয়েছে। কোনও দেশ আত্মরক্ষার তাগিদে কোনও পদক্ষেপ করলে সেটিও বুঝি আমরা।' উল্লেখ্য, যে জঙ্গিগোষ্ঠীর দুটি ঘাঁটি ইরান নষ্ট করেছে বলে দাবি, তার সঙ্গে ভারতের একরকম 'সম্পর্ক' রয়েছে বলে গত কালই দাবি করে ওয়াকিবহাল মহল। চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানে ধৃত কুলভূষণ সুধীর যাদবই ভারত এবং জইশ আল-আদলের মধ্যে যোগসূত্র। নাশকতার ষড়যন্ত্র এবং চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানের জেলে এই মুহূর্তে বন্দি রয়েছেন কুলভূষণ। আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। দিল্লির দাবি, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ইরান থেকে কুলভূষণকে অপহরণ করা হয়। ব্যবসার কাজে চাবাহার এবং বন্দর আব্বাসে ছিলেন কুলভূষণ। সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করে পাক জঙ্গিরা। ওই জঙ্গিরা জইশ আল-আদল সংগঠনের সদস্য বলে দাবি দিল্লির। 


আরও পড়ুন:সন্তানধারণে অনীহা নাগরিকদের, উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে মৃত্যু, ফের জনসংখ্যা কমল চিনে