বেজিং: প্রেমালাপে লাগাতার উৎসাহ জোগানো হচ্ছে নাগরিকদের। নিভৃতে সময় কাটানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে ছুটিও। তার পরও বিপদ এড়াতে পারল না চিন। এই নিয়ে পর পর দ্বিতীয় বছর সেখানে জনসংখ্যায় পতন দেখা গেল। ১০-২০ হাজার বা ১-২ লক্ষ নয়, একধাক্কায় ২৮ লক্ষ জনসংখ্যা কমল চিনের। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৫০ হাজার। বুধবার দেশের সরকারের তরফে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, করোনা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর দেশে মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে যেমন, তেমনই জন্মের হারে পতন দেখা গিয়েছে। (China Population)


বুধবার ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে চিন সরকার। তাতে দেখা গিয়েছে, গত এক বছরে চিনে মৃত্যুর হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। গত এক বছরে সেখানে ১ কোটি ১১ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে চিনে নতুন করে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাথাচাড়া দেয়, তাতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়াও বার্ধক্যজনিত কারণেও মারা গিয়েছেন বহু। তাই মৃত্যুর হারে বৃদ্ধি চোখে পড়বে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলেন সেদেশের বিশেষজ্ঞরা। ১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম চিনে এক বছরে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। (China Birth Rate)


তবে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে জন্মের হারে যে পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে, তা-ই সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে সরকারকে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে তরুণ প্রজন্মকে দরকার। কিন্তু চিনের জনসংখ্যায় প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যাই বেশি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্য়া হ্রাস পাচ্ছে, যা যে কোনও অর্থনীতির জন্যই বিপজ্জনক। যে কারণে গত কয়েক বছর ধরেই অল্পবয়সি যুগল এবং দম্পতিদের সন্তানধারণে উৎসাহ জুগিয়ে আসছে  চিন সরকার। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, লাগাতার সপ্তম বছরে চিনে জন্মের হারে পতন ঘটেছে। গত এক বছরে চিনে ৯০ লক্ষ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০১৬-র তুলনায় অর্ধেক। প্রতি ১০০০ মানুষ পিছু এই মুহূর্তে চিনে জন্মের হার ৬.৩৯ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার ৬.৭৭ শতাংশ ছিল। বর্তমানে চিনে মৃত্যুর হার প্রতি হাজার জনে  ৭.৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ জন্মের হারের চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি।


আরও পড়ুন: Iran Strike Pakistan: পাকিস্তানে মিসাইল হামলা ইরানের, প্রাণ গেল ২ শিশুর, 'ফল ভাল হবে না' পাল্টা হুঁশিয়ারি


এক সময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে একসন্তান নীতি চালু ছিল চিনে, তার জেরেই বর্তমানে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, দীর্ঘ দিন একসন্তান নীতি চালু থাকার ফলে, দুই প্রজন্মের মধ্যে বয়সের মারাত্মক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। বয়স্ক নাগরিকদেরই আধিক্য দেশের মোট জনসংখ্যায়। বিপদ বুঝতে পেরে ২০১৬ সালে একসন্তান নীতি থেকে যদিও সরে আসে চিন সরকার। কিন্তু সময় বদলেছে। আজকাল বেশি বয়সে বিয়ে করার চচল শুরু হয়েছে। যাঁরা বিয়ে করছেন, তাঁদের অধিকাংশ সন্তানধারণেই আগ্রহী নন। আবার যাঁদের এক সন্তান রয়েছে, তার পড়াশোনা, তাকে বড় করার ক্ষেত্রে খরচ-খরচার বহর দেখে দ্বিতীয় সন্তানের দিকে এগোচ্ছেন না আর কেউ।

 

১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চিনে একসন্তান নীতি চালু ছিল। ওই সময়ের মধ্যেই চিনের জনজীবন বেশি করে শহরকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। শহরে সন্তান মানুষ করার খরচও বেড়ে যায় একধাক্কায়। তখন থেকেই চিনের নাগরিকরা সন্তানবিমুখ হয়ে পড়েন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ২০২২ সালে জাপানে জনসংখ্যার হার ছিল প্রতি ১০০০ জনে ৬.২ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে জন্মের হার ৪.৯ শতাংশ ছিল ওই বছর।