নয়াদিল্লি: প্রায় তিন বছর হতে চলল কালো টাকার মোকাবিলা করতে মোদি সরকার দেশে নোটবন্দি করেছে। বাজারে চালু হয়েছে নতুন নোটের সিরিজও।
এই পরিস্থিতিতে, ভারতের বাজারে ফের জালনোট ছড়িয়ে অবৈধ কার্যকলাপ ঘটাতে এবং লস্কর-ই-তৈবা, জয়েশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে অর্থ জোগান দিতে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তান। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কূটনৈতিক দফতরগুলিকে। এমনই চাঞ্চল্যকর খবর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে।
কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, বিপুল পরিমাণ জালনোট ছাপানো সম্পূর্ণ করেছে পাকিস্তান। আইএসআই-এর গোপন ডেরায় তৈরি হওয়া ভারতীয় জালনোটগুলি দেখতে প্রায় অবিকল আসল মুদ্রার মতো। অর্থাৎ, এক ঝলকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে নোটগুলি আসল না নকল।
এখন সেগুলিকে ভারতে ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। মূলত এদেশে পাক-ঘনিষ্ঠ গ্যাং, সিন্ডিকেট, সূত্র ও রুট ব্যবহার করে ভারতে ওই জালনোট ঢোকানোর তোড়জোড় চালাচ্ছে পাকিস্তান।
তবে, যে বিষয়টির ওপর গোয়েন্দারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, তা হল-- নেপাল, বাংলাদেশ ও বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে থাকা কূটনৈতিক মিশনগুলির মাধ্যমে ভারতে এই টাকা ঢোকাতে চাইছে পাকিস্তান। এর জন্য কূটনৈতিক মিশনগুলির অপব্যবহার করতেও তারা পিছপা হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, জালনোট তৈরির প্রযুক্তিতে আধুনিকীকরণ করেছে পাকিস্তান। যার জেরে, নতুন করে যে জালনোটগুলি তৈরি করেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, তা দেখতে হুবহু আসল নোটের মতো। যার জেরে, সহজে বোঝার উপায় নেই, যে নোটগুলি আসল না নকল।
গত মে মাসে, কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে ধরা পড়ে দাউদ ইব্রাহিম কোম্পানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউনুস আনসারি ও আরও তিন পাক নাগরিক। তাদের কাছ থেকে মোট ৭.৬৭ কোটি টাকা মূল্যের জালনোট উদ্ধার হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, আগে লুকিয়ে গোপনে এবং সন্তর্পণে জালনোট ভারতে ঢোকাত পাকিস্তান। কিন্তু, এখন একেবারে বেপরোয়াভাবে এই কাজ তারা করছে।
গোয়েন্দারা জানান, ইউনুস আনসারির কাছে থেকে যে জালনোট উদ্ধার করা হয়, দেখা যায় যে সেগুলি মালপত্রের ব্যাগের মধ্যে যেনতেনভাবেই রাখা ছিল। অর্থাৎ, গোপনীয়তার কোনও ভ্রুক্ষেপ করছে না চোরাচালানকারীরা। জেরায় উঠে আসে টাকাগুলির জোগান দিয়েছে পাকিস্তানের কুখ্যাত জালনোট কারবারী রজ্জাক মারফানি। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে নেপালে এক ভারতীয় কূটনীতিককে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইউনুসকে।
এর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর, পঞ্জাবে শিখ মৌলবাদী সংগঠন খলিস্তান জিন্দাবাদ ফোর্সের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের থেকে ১০ লক্ষ জাল ভারতীয় মূদ্রা উদ্ধার করা হয়। এরসঙ্গে, ৫টি একে ৪৭ রাইফেল, ৩০ বোর পিস্তল, ৯টি গ্রেনেড, ৫টি স্যাটেলাইট ফোন, ২টি মোবাইল, ২ ওয়্যারলেস সেট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
গোটাটাই ড্রোনের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। তিনদিন পরই, ঢাকায় ৪০ লক্ষ মূল্যের জাল ভারতীয় নোট উদ্ধার করে বাংলাদেশ পুলিশ। জানা যায়, নোটগুলি দুবাই থেকে এসেছে। প্রেরক, জালনোট পাচারের কুখ্যাত আইএসআই ডিলার আসলাম শেরার ছেলে সলমন শেরা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, নোটবন্দির আগে কাঠমাণ্ডুতে পাক দূতাবাস ছিল জালনোটের প্রাণকেন্দ্র। মূলত, বীরগঞ্জ থেকেই যাবতীয় জালনোট পাচার করে ভারতে ঢোকানো হত। গোয়েন্দাদের দাবি, কাঠমাণ্ডু থেকে বীরগঞ্জ পর্যন্ত এজেন্টদের বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করছিল আইএসআই।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত পাক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে করে দুবাই, কুয়ালা লাম্পুর, হংকং ও দোহার কূটনৈতিক মিশনে জালনোট পাচার করত আইএসআই। সেখান থেকে জালনোট বিমানে আসত কাঠমাণ্ডু ও ঢাকায়। সেখানে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনগুলিকে অপব্যবহার করে জালনোট ভারতে ঢোকানো হত।
একটা সময়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর শোরগোল পড়ে। যার জেরে জালনোট পাচার ও নাশকতামূলক কার্যকলাপে অর্থ সাহায্য করার জন্য ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার সহ শীর্ষ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয়।
বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিনের শীর্ষ নেতা ইদ্রিশ শেখ জেরায় স্বীকার করে ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এরপরই, ২০১৫ সালের শেষদিকে, ফারিনাকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে, সেই বছরের গোড়ায় ঢাকার পাক মিশনের কন্সুলার বিভাগের অ্যাটাচে মাজহার খানকেও জালনোট পাচার ও জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।