ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে দিনকয়েক আগে ভাঙচুর চালিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া ১০০ বছরের পুরানো মন্দিরের পুনর্নির্মাণে প্রশাসনকে নির্দেশ দিল সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট। খাইবার পাখতুনখোয়ার কারক জেলার টেরি গ্রামের ওই মন্দিরে হিন্দু ধর্মীয় নেতার সমাধিও ছিল। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাচীন মন্দিরের সংস্কারের অনুমতি পাওয়ার পরই গত ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় কিছু মৌলবী ও জমিয়ত-উলেমা-ই-ইসলাম পার্টির (ফজল উর রহমান গোষ্ঠী) সমর্থকরা পুরানো কাঠামোর পাশাপাশি নতুন করে কাজ শুরু হওয়া মন্দিরটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তানের সু্প্রিম কোর্টের অভিমত, গোটা বিষয়টি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে লজ্জায় ফেলেছে।
সুপ্রিম কোর্ট আজ স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল। সেইমতো এদিন ইভ্যাকুয়ি প্রপার্টি ট্রাস্ট বোর্ডকে ধ্বংস হওয়া মন্দিরের পুনর্নির্মাণ শুরু করতে বলে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি বোর্ডকে দেশব্যাপী চালু থাকা ও বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা মন্দির, গুরুদ্বারের বিস্তারিত তথ্যও দিতে বলে সর্বোচ্চ আদালত। বোর্ড পাকিস্তান সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থা যারা দেশভাগের সময় ফেলে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দু, শিখদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি দেখভাল করে।
পাক সংবাদপত্র দি ডন-এর খবর, পাক শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ বোর্ডকে নির্দেশ দেন, দেশব্যাপী যত মন্দিরের জমি দখল হয়েছে, সবগুলিকে দখলমুক্ত করে এজন্য দোষী কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজ শুনানিতে হাজির থাকা খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশ প্রধান আদালতকে জানান, মন্দিরে তাণ্ডব, ভাঙচুর চালানোয় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেসময় ডিউটিতে থাকা এসপি, ডিএসপি সমেত ৯২ জন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বোর্ডকে আরও বলেন, মন্দির পুনরায় গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় অর্থ ভাঙচুরের ঘটনার পিছনে মূল সন্দেহভাজন চক্রী মৌলবী মহম্মদ শরিফের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
রমেশ কুমার নামে হিন্দু জনপ্রতিনিধির দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতেই পাক সুপ্রিম কোর্ট আজ যাবতীয় নির্দেশ জারি করে। ১৯৯৭ সালেও ওই ধর্মস্থান আক্রান্ত হয়েছিল বলে আদালতকে জানান তিনি।


সংখ্যালঘু অধিকার সংক্রান্ত এক সদস্যের কমিশন, খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যসচিব, পুলিশের আইজি-কে আগেই হামলাস্থল ঘুরে ৪ জানুয়ারি রিপোর্ট পেশ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সংখ্যালঘু অধিকার কমিশনের প্রধান শোয়েইব সাডল রিপোর্টে লিখেছেন, পুলিশের সামনেই গত ৩০ ডিসেম্বর হামলাকারীরা যা করেছে, তাতে শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেগেই আঘাত লাগেনি, পাকিস্তানেরও বদনাম হয়েছে গোটা বিশ্বের সামনে। সেদিন মারমুখী জনতা মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর মূল্যবান সম্পত্তিও লুঠপাট করে, কিন্তু স্টেশন হাউস অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ডিএসপি সম্ভবত কোনও পদক্ষেপই করেননি।