আশাবুল হোসেন, উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায় ও সত্য়জিৎ বৈদ্য়: একদিকে, রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের (Panchayat Poll Violence) অভিযোগে তৃণমূলকে (TMC) নিশানা করছে এরাজ্যের কংগ্রেস (Congress) নেতৃত্ব। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুতে সনিয়া গান্ধীর আমন্ত্রণেই বৈঠকে যোগ দিতে বেঙ্গালুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 9Mamata Banerjee)। যোগ দিলেন নৈশভোজেও। বঙ্গে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি- এই ঘটনায় কটাক্ষ বিজেপির।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রাজ্য়ে রক্তস্নাত গণতন্ত্র, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার ভয়ঙ্কর অভিযোগে প্রতিদিন সরব অধীর চৌধুরীরা, আর তার মধ্য়েই সনিয়া গান্ধীর আমন্ত্রণে বিরোধী জোটের বৈঠকে অংশ নিতে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও অভিষেক।
বেঙ্গালুরুতে এক মঞ্চে দেখা হল সনিয়া-মমতা-রাহুল-অভিষেকের। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর থেকে রবিবার অবধি মৃত ৫৫ জনের মধ্য়ে, কংগ্রেসের ৮ জন রয়েছেন। পঞ্চায়েতের ভোট সন্ত্রাসের প্রথম বলিও একজন কংগ্রেস কর্মীই। প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূলের দিকেই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। আর এবার সেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের আহ্বানেই বেঙ্গালুরুতে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রী। এদিনের, প্রস্তুতি বৈঠকে প্রায় দু-বছর পর দেখা হল সনিয়া গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সনিয়া গান্ধীর পাশেই বসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
সূত্রের দাবি, বৈঠকের ফাঁকে এদিন দু-জনের কুশল বিনিময় হয়। পরস্পরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন দুই সনিয়া ও মমতা। প্রস্তুতি বৈঠকের পাশাপাশি, এদিন সনিয়ার ডাকা নৈশভোজেও অংশ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, প্রস্তুতি বৈঠকে সকলকে বিরোধী জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া দেওয়া হয়। এনিয়ে, প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বিরোধী মহাজোটের নতুন নামকরণ হবে। সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সেই নাম ঘোষণা হতে পারে।
আর কতদিন এমনটা চলবে? কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে এই প্রশ্ন করছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের আহ্বায়ক অমিত মালব্য টুইট করে বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে কংগ্রেস কর্মীরাও আছেন। রাহুল গাঁধী কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয়ে হিংসা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করবেন না আত্মসমর্পণ করবেন? এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে 'স্টেট স্পনসরড' রক্তপাত নিয়ে তাঁর মৌনতা কাপুরুষতা এবং নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার পরিচয় দিচ্ছে।'
রাজ্য়ে যখন একের পর এক কংগ্রেস কর্মী খুন হচ্ছেন, তখন বেঙ্গালুরুতে তৃণমূলের সঙ্গে নৈশভোজ কিংবা মেগা মিটিং কি প্রদেশ কংগ্রেসের কাছেও অস্বস্তির নয়? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। এর আগের মিটিংয়ের সময়ে অধীর চৌধুরী বে
কংগ্রেস কৌস্তভ বাগচী বলেন, 'জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আলাদা জায়গা। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীর সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগ নেই।'
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'দিল্লির বিজেপি সরকার ফ্যাসিস্ট মনোভাব নিয়ে চলছে, তার বিরুদ্ধে জোট বাধা দরকার, রাজ্য দলগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাম দলগুলি বরাবর এমন কথা বলছে।'
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'পাটনার সভার পর, বেঙ্গালুরুর সভার পর, সনিয়া গাঁধী বা প্রকাশ কারাটের ছবি বা বাণীকে সামনে রেখে লড়াই করতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গের লোক আপনাদের কথার ওপর বিশ্বাস করবে না। প্রচলিত বাক্য়ে পরিণত হবে দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি... যারা প্রকৃতভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান কিন্তু বিজেপিতে যোগদান করতে পারবেন না, তাদের বলছি নেতারা সেটিং করছে করুক আপনারা আলাদা মঞ্চ তৈরি করে লড়াই করুন।'
যে কংগ্রেস বারবার মোদি-মমতা সেটিংয়ের অভিযোগ করে, সেই তাদের আমন্ত্রণেই বেঙ্গালুরুতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়! প্রশ্ন হল, দ্বন্দ্বের মধ্য়ে দিয়ে কি বন্ধুত্ব সম্ভব?
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন? চলতি সপ্তাহে কোন কোন চাকরির দিকে নজর রাখবেন?