নয়াদিল্লি: সংসদে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা এবং তার পরবর্তী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লাগাতার আলোচনার দাবি জানাচ্ছিলেন বিরোধীরা। শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের সেই দাবি মেনে নিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সোমবার থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। আর তার একদিন আগে বিরোধীদের দাবি মেনে নিল কেন্দ্র। ফলে শাসক-বিরোধী তরজায় সংসদের বাদল অধিবেশন তেতে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। (Monsoon Session of Parliament)
পহেলগাঁও হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ ছাড়াও, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েও লাগাতার আলোচনার দাবি তুলছিলেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র। তবে বিরোধীদের তরফে চাপ বাড়ানো হচ্ছে। ২১ জুলাই থেকে ২১ অগাস্ট, আগামী একমাস ধরে সংসদের বাদল অধিবেশন চলবে। (I.N.D.I.A Alliance)
বাদল অধিবেশনের আগে, শনিবারই বিরোধী শিবির I.N.D.I.A-র ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা, ‘অপারেশন সিঁদুর’, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারতের বিদেশনীতি, নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটারতালিকা সংশোধনের মতো বিষয়গুলি উঠে আসে আলোচনায়। সেই নিয়ে সরকারের উপর চাপ বাড়ানো হবে বলে ঠিক হয়েছে।
বিরোধীদের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, রাহুল গাঁধী, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবসেনা (UBT)-র উদ্ধব ঠাকরে, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির শরদ পওয়ার, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তেজস্বী যাদব, DMK-র তিরুচি এন শিব, সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি, CPI লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্যরা।
গতত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পর এই প্রথম সংসদের অধিবেশন বসছে। জঙ্গি হামলার পর ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায়, সেই নিয়ে প্রায় সব মহল থেকে বিশে, অধিবেশন ডাকার দাবি উঠছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথে হাঁটেনি। বাদল অধিবেশনে তাই সরকারের উপর চাপ বাড়াতে বদ্ধপরিকর বিরোধীরা। তবে পরিস্থিতি আঁচ করেই কেন্দ্রের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু শান্তিপূর্ণ অধিবেশনের ডাক দিয়েছেন।
সংসদের এই বাদল অধিবেশনের দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে গোটা দেশ। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর দাবি করে চলেছেন ট্রাম্প। ব্যবসার টোপ দিয়ে তিনি যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করেছেন বলে যেমন দাবি করেছেন, তেমনই সংঘাতে যুদ্ধবিমান নামানো হয় বলেও বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন তিনি। ভারতের তরফে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে বিরোধীরাও প্রশ্ন তুলে আসছেন। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। সেক্ষেত্রে ট্রাম্প আগ বাড়িয়ে কী করে এই ধরনের কথা বলছেন, তা নিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে জবাব আদায় করতে মুখিয়ে বিরোধীরা।
এখন থেকেই সেই নিয়ে সাবধানী অবস্থান নিচ্ছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলের সাংসদ প্রবীণ খন্ডেলওয়াল তাই বলেন, “বাদল অধিবেশে অনেক কাজ সারতে হবে। আটটি বিল রয়েছে। আশাকরি বিরোধীরা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবেন।” কিন্তু রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাংসদ মনোজ ঝা স্পষ্ট বলেন, “সংসদের উদ্দেশ্য কী? মানুষের উদ্বেগ সংসদে তুলে ধরতে হয়। পহেলগাঁও হামলার যন্ত্রণা মনে রাখতে হবে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের কূটনীতির উপরও প্রভাব ফেলেছে। কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে নিশানা করা আমাদের লক্ষ্য় নয়। এখানে দেশের প্রশ্ন জড়িয়ে। এমন পরিস্থিতি হল কেন? কারও কাছে উত্তর নেই।”
কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি হলেন, “একজোটে আমরা সকলে পহেলগাঁও হামলাকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম। গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথা তুলেধরতেই হবে। গোটা ঘটনায় সরকার কেন নীরব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। বিহারে কী ভাবে দলিত, তফসিলি জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু এবং দরিদ্র উচ্চজাতির মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও কথা বলব আমরা। গাজার কথাও উঠবে।”
সর্বদল বৈঠকে কেন্দ্রকে একহাত নেয় CPI-ও। দলে রাজ্যসভার সাংসদ পি সন্তোষ পহেলগাঁও হামলায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাফিলতি, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি, ট্রাম্প কেন কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতার কথা বলছেন, সেই নিয়ে সরকারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিহারে ভোটারতালিকায় রদবদল ঘটানো নিয়েও সরব হয়েছেন। কর্নাটকের ধর্মস্থল থেকে যে গণহত্যার অভিযোগ আসছে, তা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সন্তোষ। ফলে বাদল অধিবেশনের দিকেই এই মুহূর্তে নজর সকলের।