নয়াদিল্লি: করোনা কালে যখন গৃহবন্দি ছিলেন দেশের মানুষ, জীবন-জীবিকার উপর সঙ্কট নেমে আসে, সেই সময়ও লুটিয়েন্স দিল্লিতে ২০ হাজার কোটির সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের প্রকল্প, সেন্ট্রাল ভিস্তার অধীনে তৈরি নয়া সংসদভবনের দুরাবস্থা প্রকট হয়ে ধরা দিল এক বছরেই। রাজধানীতে যেই না বর্ষা নেমেছে, জল থৈ থৈ হয়ে গিয়েছে নয়া সংসদভবনও। অতি সম্প্রতি অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরের ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ার ঘটনা সামনে আসে। বুধবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে নয়া সংসদভবনেও। ইতিউতি বালতি বসিয়ে রাখা হয়েছে সংসদভবনের অন্দরে। ৯৭১ কোটি টাকা খরচে তৈরি নয়া সংসদভবনের এমন অবস্থা হল কেন, উঠছে প্রশ্ন। (Parliament Water Leaks)


মঙ্গলবার দিল্লিতে বৃষ্টির পরই জল ঢুকতে শুরু করে নয়া সংসদভবনে। বিশেষ করে 'মকরদ্বারে' দিয়ে ঢোকার মুখটি জলে ভরে যায়। ছাদ বেয়ে জল পড়ে। ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, ছাদ থেকে অবিরাম জলের ধারা নেমে আসছে। মোকাবিলায় বালতি বসিয়ে রাখা হয়েছে সংসদের ভিতর। খোলা দরজা দিয়ে জলের স্রোত ঢুকতে দেখা যায় ভিতরে। প্যান্ট গুটিয়ে কোনও রকমে পেরনোর চেষ্টা করেন নিরাপত্তা রক্ষী থেকে কর্মীরা। সংসদে ঢোকার যে মূল রাস্তাটি, সেটিও জলমগ্ন হয়ে যায়। নয়া সংসদভবনের এমন হাল হল কেন, সেই নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ মানিকম ঠাকুর।  তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, "নরেন্দ্র মোদির অহং বোধের প্রতীক এই অট্টালিকা। ভারত মণ্ডপমেো জল ঢোকে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে যে উনি কেঁপে গিয়েছেন, তাতে এমন হওয়াই স্বাভাবিক।" চটজলদি নির্মাণকার্য সারতে গিয়েই যে বিপত্তি ঘটেছে, আবারও সেই দাবি করেন মোদি। ২০২৪ সালের লোকসসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি নয়া সংসদভবন এবং অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ করে উদ্বোধন করে দেওয়া হয় বলে আগে থেকেই অভিযোগ তুলছিলেন বিরোধীরা। (Parliament Waterlogged)


২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে 'Redevelpment of Central Vista Avenue' প্রকল্পের ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নয়া সংসদভবনটি নির্মাণের বরাত পায় TATA Projects Ltd, ৮৬২ কোটি টাকায়। নয়া সংসদভবনটির নকশা তৈরি করেন গুজরাতের আমদাবাদের স্থপতি বিমল পটেল। সবমিলিয়ে ৯৭১ কোটি টাকা খরচ হয়। মোদির সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয় বিমলের। ১৯৯৮ সালে বিমলের হাতেই সবরমতী রিভারফ্রন্ট ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের নকশা তৈরির দায়িত্ব ওঠে। ২০১৪ সালে গুজরাত সরকারের মিনিস্টার্স ব্লক এবং সেক্রেট্যারিয়ট ক্যাম্পাস ডেভলপমেন্টের কাজও হাতে পান। ২০১৮ সালে বারাণসীতে বিশ্বনাথ ধাম, শ্রী কাশী বিশ্বনাথ মন্দির প্রকল্পের কাজও বিমলের হাতেই, ওঠে যা এখনও চলছে। মোদির সঙ্গে সুসম্পর্কের দরুণই বিমল নয়া সংসদ ভবনের নকশা তৈরির বরাত পান বলে দাবি ওঠে গোড়াতেই।



আরও পড়ুন: Ashwini Vaishnaw: দুর্ঘটনা কমিয়ে হাততালি পেতেন মমতা, তিনি কেন পাবেন না? লোকসভায় মেজাজ হারালেন রেলমন্ত্রী


২০২৩ সালের ২০ মে নয়া সংসদভবনের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হয়। সেই সময় বলা হয়, আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে নয়া সংসদভবনটি। শক্তিশালী ভূমিকম্পও চলাতে পারবে না। ১৫০ বছর স্বমহিমায় টিকে থাকবে। এর পর ২৮ মে সেটির উদ্বোধন করেন মোদি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে নয়া সংসদভবনে অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু এক বছর কাটতে না কাটতেই নতুন সংসদভবনের এমন অবস্থা হওয়ায় সরব হয়েছেব বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ মানিকম জানান, যে পথ দিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি, সেখানেই জল পড়ছে। বর্ষার দিনে সংসদভবনটি অধিবেশনের জন্য অনুপযুক্ত বলে দাবি করেন তিনি। সংসদের অধিবেশন স্থগিত রাখতে নোটিসও দেন। প্রত্যেক দলের সাংসদকে নিয়ে বিশেষ কমিটি গড়ার আর্জি জানান, যাতে জল ঢোকা থেকে নকশা, সংসদভবন নির্মাণে ব্যবহৃত মাল-মশলা, এবং মেরামতির দিকগুলি খতিয়ে দেখা যায় এবং দেশের মানুষের সামনে রিপোর্ট তুলে ধরা যায়।



এই প্রথম নয় যদিও, এর আগেও সংসদভবনের নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নয়া সংসদভবন উদ্বোধনের পর বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে, প্রযুক্তিগত বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সাংসদদের যে মাইক্রোফোন এবং ইয়ারফোন ধরানো হয়, সেগুলিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। এমনকি বিকল Acoustics System বসানো হয়েছে বলেও দেখা যায়, যার মাধ্যমে গোটা সংসদভবনে প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। পাশাপাশি, বায়োমেট্রিক এবং বারকোড বসানো নিরাপত্তা প্রযুক্তিতেও ত্রুটি ধরা পড়ে। বর্ষা শুরু হতে এবার জলও ঢুকতে শুরু করল। সেই অবস্থাতেই বৃহস্পতিবার অধিবেশন চলে যদিও। তবে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।