নয়াদিল্লি: পর পর ট্রেন দুর্ঘটনা ঘিরে প্রশ্নের মুখে ভারতীয় রেল। কিন্তু রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দায়িত্ব এড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। একদিন আগে লোকসভায় বন্দেভারত, বুলেট ট্রেন ছুঁয়ে গেলেও, একটি বারের জন্যও দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি তাঁর মুখে। শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদির বন্দনা করেই ভাষণ শেষ করেছিসেন। সেই নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে এবার লোকসভায় কার্যতই ফুঁসে উঠলেন তিনি। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টেনে বিরোধীদের আক্রমণ করলেন। (Ashwini Vaishnaw)
পর পর ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন অশ্বিনী। তিনি রেলমন্ত্রী নন, 'রিলমন্ত্রী', শুধু ছবি তুলতে যান বলেও কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। সেই নিয়ে এদিন লোকসভায় মেজাজ হারান অশ্বিনী। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রেন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দুর্ঘটনা কমিয়েছিলেন। আমাদের আমলে দুর্ঘটনা আরও কমেছে। তাহলে মমতা তখন হাততালি পেলে, এখন কেন সমালোচনা হবে?" (Train Accidents)
একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় এদিনও উত্তাল হয় লোকসভার অধিবেশন। সেখানে এযাবৎ চুপ থাকলেও, এদিন ফুঁসে ওঠেন অশ্বিনী। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, লোকসভায় ট্রেন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরতেন তিনি। দুর্ঘটনা .২৪ থেকে .১৯-এ নামিয়ে এনেছেন জানাতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল কক্ষ। আর আজ দুর্ঘটনা যখন .১৯ থেকে .০৩-এ নেমে এসেছে, তখনও অভিযোগ তুলছেন এঁরা। এটা কেন হবে?"
বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে অশ্বিনী আরও বলেন, "আজ যাঁরা চিৎকার করছেন, তাঁদের প্রশ্ন করা উচিত, গত ৫৮ বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছেন? এক কিলোমিটারও Automatic Train Protection-এর ব্যবস্থা করতে পারেননি। আজ প্রশ্ন তোলার সাহস হয় কী করে?" কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এভাবে দেশ চলতে পারে না বলেও অভিযোগ করেন অশ্বিনী। তাঁর বক্তব্য, "এভাবে কি দেশ চলতে পারে? সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়িয়ে, ট্রোল বাহিনী নামিয়েছে কংগ্রেস। রেলের নিত্যযাত্রী, ২ কোটি মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে।" এর পাল্টা অশ্বিনীকে একহাত নেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, "আজকাল অন্য নীতি দেখছি। নৈতিক দায়স্বীকারের পরিবর্তে ইতিহাসকে দোষ দেওয়ার রীতি শুরু হয়েছে।" রেলমন্ত্রী নন, অশ্বিনী আসলে 'লাইনচ্যুত মন্ত্রী' বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
রেলের শূন্যপদ পূরণ না করে, ঠিকে কর্মীদের দিয়ে কাজ চালানোর অভিযোগ উঠছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে লোকসভায় এদিন অশ্বিনী জানান, UPA আমলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালে ৪ লক্ষ ১১ হাজার নিয়োগ হয়। সেই নিরিখে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত NDA সরকার ৫ লক্ষ ২ হাজার নিয়োগ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এই মুহূর্তে ৪০ হাজার ৫৬৫ শূন্যপদ রয়েছে বলে জানান। অশ্বিনীর দাবি, আগে লোকো পাইলটদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে হতো, বিশ্রামের সময় পেতেন না। ২০১৬ সালে আইন সংশোধন করে তাঁদের আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রত ঘর, লোকো ক্যাব পান তাঁরা, যা আগে ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
অশ্বিনী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ২৫০০ নতুন জেনারেল কোচ তৈরির কাজ চলছে। ১০ হাজার কোচ তৈরির লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রের। প্রত্যেক মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনে আগামী দিনে অন্তত চারটি জেনারেল কোচ থাকবে এবং দুই-তৃতীয়াংশ নন-এসি কোচ ও একৃতৃতীয়াংশ এসি কোচের অনুপাত বজায় থাকবে বলে জানান তিনি।