নয়াদিল্লি: দলে দলে সংসদ থেকে সাসপেন্ড বিরোধী শিবিরের সাংসদরা। চলতি শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিরোধী শিবিরের ১৪১ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শীতকালীন অধিবেশন শেষ হতে এখনও তিন দিন বাকি রয়েছ, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে যা শেষ অধিবেশন। তার আগে এই মুহূর্তে দেশের সংসদ কার্যতই বিরোধীশূন্য। (Parliament Winter Session) সবমিলিয়ে ১৫০ জন সাংসদ রয়ে গিয়েছেন বিরোধী শিবিরের।


গত সপ্তাহে লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে কয়েক জন মিলে যে তাণ্ডব চালায়, তার জেরেই এমন পরিস্থিতি। লোকসভার নিরাপত্তায় গলদ থেকে, অভিযুক্তদের জন্য বিজেপি সাংসদের দফতর থেক ইস্যু করা পাস, সেই নিয়ে সংসদে সরব হন বিরোধীরা। জাতীয় নিরাপত্তার দাবিকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি চান। সেই নিয়ে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় এবং লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা দফায় দফায় বিরোধী শিবিরের সাংসদদের সাসপেন্ড করেন। মঙ্গলবারও নতুন করে ৪৯ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। (Parliament MPs Suspensions)


১৪ ডিসেম্বরের পর, মঙ্গলবার ডেরেক ও'ব্রায়েনের পর রাজ্যসভার ৪৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহ সাসপন্ড হন ২৪ জুলাই। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৭ জন সাংসদ রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন। রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য নাম হল, কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপাল, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। এর পাশাপাশি, আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রিভিলেজ কমিটিকে সেই নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তত দিন পর্যন্ত ওই ১১ জনকে সাসপেন্ড বলেই ধরা হবে।


আরও পড়ুন: Jagdeep Dhankhar: 'অধঃপতনের কোনও সীমা নেই দেখছি', কল্যাণের মিমিক্রি, রাহুলের ভিডিওগ্রাফিতে 'আহত' ধনকড়


রাজ্যসভার ২৩৮ জন সাংসদের মধ্যে বিরোধী জোট I.N.D.I.A-এর সদস্য সংখ্যা ৯৫। এর মধ্যে চলতি অধিবেশনেই ৪৬ জন সাসপেন্ড হয়েছেন। সেই নিরিখে, বিজেপি-র একারই ৯৩ জন সাংসদ রয়েছেন রাজ্যসভায়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, চলতি শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় I.N.D.I.A জোটের শক্তি কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। লোকসভায় বর্তমানে তাদের এক তৃতীয়াংশ সাংসদই রয়েছেন। 


১৪ ডিসেম্বর ১৩ জনকে, সোমবার ৩৩ জনকে এবং মঙ্গলবার ৪৯ জনকে লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ লোকসভা থেকে এখনও পর্যন্ত ৯৫ জন সাসপেন্ড হয়েছেন। এমনিতে লোকসভার মোট সাংসদের সংখ্যা ৫২২, এর মধ্যে শাসকদল বিজেপি-র সাংসদের সংখ্যা ২৯০। শরিকদের নিয়ে ৩০০-র বেশি সাংসদ রয়েছে NDA শিবিরের। বিরোধী শিবির I.N.D.I.A জোটের মোট ১৩৩ জন সাংসদ। ৯৫ জনকে সাসপেন্ড করা হলে বেঁচে রইলেন মাত্র ৩৮ জন। শশী তারুর, ডিম্পল যাদব, কার্তি চিদম্বরম, ফারুখ আব্দুল্লা, সুপ্রিয়া সুলে, কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা সাসপেন্ড হয়েছেন বিরোধী শিবির থেকে। দেশের সংসদকে বিরোধীমুক্ত করাই বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী শিবিরের সাংসদরা।


২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস মেয়াদ রয়েছে বর্তমান সংসদের। বর্তমানে বিরোধী শিবির বলতে অন্ধ্রপ্রদেশেরে YSR Congress এবং ওড়িশার বিজু জনতা দলের সাংসদরাই রয়ে গিয়েছেন, বিরোধী হিসেবে যাঁদের অবস্থান নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যথেষ্ট। কারণ বিভিন্ন ইস্যুতে বরাবর সরকারকেই সমর্থন করে এসেছেন তাঁরা। এমনকি বিল পাস করানোর ক্ষেত্রেও সরকারের পাশে থাকতে দেখা গিয়েছে যাঁদের।