কলকাতা: পুজোর মুখে টোল পণ্ডিতদের নিয়ে সরকারি সভা। আর সেই সভা ঘিরেই এবার রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল।

সোমবার সল্টলেকে সংস্কৃত টোল পণ্ডিতদের নিয়ে সমাবেশে হাজির ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। টোলের পুনরুজ্জীবনে একগুচ্ছ ঘোষণা করলেন তিনি। পণ্ডিতদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পার্থ। বলেছেন, ‘কেউ ওঁদের দেখেন না,  দেখেন শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।‘

যদিও পাল্টা কটাক্ষ এসেছে বিজেপি শিবির থেকে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা খড়্গপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পণ্ডিতদের নিয়ে আগে ভাবলে এই দুর্দশা হত না।

কখনও রামনবমী, হনুমানজয়ন্তী, কখনও রথ কিংবা দূর্গাপুজো - বর্তমানে রাজ্যজুড়ে ধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে রাজনীতি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধর্ম নিয়ে কার্যত লড়াইয়ে নেমেছে তৃণমূল-বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একের পর এক পুজোর উদ্বোধন করে চলেছেন, তখন জে পি নাড্ডা তর্পণ করছেন। আবার অমিত শাহ পুজোর উদ্বোধনে আসছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই এবার টোল পণ্ডিতদের নিয়ে সভায় তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ৫০৯ জন সংস্কৃত টোল পণ্ডিত রয়েছেন রাজ্যে। অনুমোদন পাননি এমন পণ্ডিতের সংখ্যা ২৩২। পণ্ডিতদের সঙ্গে নিয়ে টোল এবং সংস্কৃত শিক্ষা পুনরুজ্জীবনের বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার।

পার্থ বলেছেন, ‘সময় উপযোগী করে সংস্কৃত চর্চাকে বাঁচাতে হবে। কত টোল, কত ছাত্র, কী পড়াবেন, সেগুলি আপনারা ঠিক করুন। গ্র্যাচুইটি দেওয়া হবে।’ টোলে পরীক্ষা চালু, ভাতা-বৃদ্ধি সহ একাধিক দাবি সরকারের কাছে পেশ করে পণ্ডিত সমাজ। নিখিলবঙ্গ সংস্কৃত সেবী সমিতির সহ সম্পাদক অচ্যুতানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা ৬, ৩০০ টাকা পাই। গ্র্যাচুইটি দিতে বলেছি সরকারকে।’

এদিনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্যের টোলগুলিকে অনুমোদন দেবে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। পণ্ডিতদের দেওয়া হবে গ্র্যাচুইটি। পণ্ডিতদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় করের নেতৃত্বে তৈরি হবে একটি কমিটি। সংস্কৃত টোল পণ্ডিতদের নিয়ে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে পাল্টা বিঁধেছে বিজেপি। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘যদি সত্যি পণ্ডিতদের দেখে তৃণমূল তাহলে এমন দুরবাস্থা কেন ওদের। তৃণমূলকে যারা বিশ্বাস করে তারাই মরেছে। আমার সঙ্গে ব্রাহ্মণরা এসেছিলেন দেখা করতে। আমি ওদের দাবির সঙ্গে সহমত। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পুজো হচ্ছে। পুরোহিতদের প্রণামী বাড়ানো উচিত।’

বিজেপিকে পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসক দল। পার্থ বলেছেন, ‘সবাই বলে পিছনে আছি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সত্যিকারের পুরোহিতদের পাশে থাকেন।’ গত মাসে পুরোহিতদের সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের আরেক হেভিওয়েট মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার টোল পণ্ডিতদের অনুষ্ঠানে হাজির পার্থ চট্টোপাধ্যায়।