করাচি: ২০১৬ সালে পরিবারের সম্মানরক্ষার অজুহাতে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালোচকে খুনের অপরাধে তাঁর ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে মুলতানের একটি আদালত। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তানে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই কঠোর আইন করা হয়েছে। নতুন আইনানুসারে, সম্মান রক্ষার অজুহাতে কাউকে খুন করা হলে দোষী প্রমাণিত হওয়া ব্যক্তির ২৫ বছরের কারাদণ্ড বাধ্যতামূলক।


ফিরে দেখা যাক কান্দিল হত্যাকাণ্ড-

পাকিস্তানের একটি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় কান্দিলের। তাঁর প্রথম নাম ছিল ফৌজিয়া আজিম। অল্পবয়সেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। এরপরেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সোশ্যাল মিডিয়া তারকা হয়ে ওঠার পর মডেলিংয়ে মন দেন কান্দিল। তিনি ‘পাকিস্তানের কিম কার্দাশিয়ান’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁকে একটি মিউজিক ভিডিওতেও দেখা যায়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত খোলামেলা পোশাকে তোলা ছবি পোস্ট করতেন। পাকিস্তানের রক্ষণশীল মানসিকতার বিরুদ্ধেও প্রকাশ্যে সরব হন কান্দিল। ফলে রক্ষণশীল মানসিকতার ব্যক্তিদের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে।

২০১৬ সালের ১৫ জুলাই কান্দিলের বাপের বাড়িতেই তাঁকে খুন করেন ভাই মহম্মদ আজিম। প্রথমে মাদক খাইয়ে আচ্ছন্ন করার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয় কান্দিলকে। এই ঘটনার কয়েকদিন পর ধরা পড়েন আজিম। তিনি তদন্তকারীদের জানান, কান্দিল সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব ছবি পোস্ট করতেন, সেগুলির ফলে পরিবারের সম্মানহানি হয়েছে। সেই কারণেই তাঁকে খুন করেছেন। এই ঘটনার জন্য তাঁর কোনও অনুতাপ নেই।

খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে মুফতি আবদুল কাভি নামে এক ধর্মযাজকের সঙ্গে তোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন কান্দিল। এর ফলে ক্ষুব্ধ হন কাভির অনুগামীরা। অভিযোগ ওঠে, কান্দিল হত্যাকাণ্ডে কাভিরও যোগ রয়েছে।

কান্দিলকে খুন করার পর আজিমের তীব্র নিন্দা করলেও, আদালতে শুনানি চলাকালীন অবশ্য তাঁকে আগাগোড়া সমর্থন করেন বাবা-মা। তাঁরা আদালতে লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, এই ঘটনায় ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে আদালত কান্দিল ও আজিমের বাবা-মায়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি। আজিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। কাভি সহ অন্য ৬ অভিযুক্তকে অবশ্য প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে।