সোল: কাজাখস্তানে বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সেই আবহেই এবার দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান দুর্ঘটনা ঘটল। রবিবার সকালে ১৮১ জন যাত্রীসমেত সেখানকার বিমানবন্দরে ভেঙে পড়ে একটি বিমান। মাত্র দু'জনযাত্রীকে জীবিত অবস্থায় বের করে আনা গিয়েছে। ল্যান্ডিং গিয়ার ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেওয়াতেই বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় বলে প্রথমে জানা যায়। কিন্তু কেন সমস্যা হল ল্যান্ডিং গিয়ারে? এর জবাব দিতে গিয়ে পাখিদের আক্রমণকে দায়ী করেছেন বিমান কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনার পর বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে তা থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে পাখিদের সঙ্গে সংঘর্ষেই বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ করেনি বলে মনে করা হচ্ছে। (Plane Crash in South Korea)
রবিবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি Jeju Air সংস্থার। তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক থেকে ফিরছিল বিমানটি। সকাল ৯টা বেজে ৭ মিনিটে দেশের দক্ষিণে অবস্থিত বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিমানটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় কার্যত। দাউদাউ করে জ্বলছিল আগুন। কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী চোখে পড়ে বহু দূর থেকে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোঁয়ার মুহূর্তে কী করে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠছিল। এবার একাধিক তথ্য সামনে এল। (Plane Crash News)
বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নিরাপদ অবতরণের সহায়ক। অবতরণের সময় বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের টায়ারই প্রথমমাটি ছোঁয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় পাইলট পেটের উপর ভর করে বিমানটিকে মাটি ছোঁয়ানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই মতোই রানওয়ে দিয়ে বিমানটিকে ঘষে ঘষে টেনে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু সেই অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ে থেকে বিপথগামী হয়ে যায় বিমানটি। সামনের দেওয়ালে সজোরে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ এবং আগুনের গ্রাসে চলে যায় বিমানটি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে তীব্র গতিতে বিমানটিকে নেমে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য যেখানে মেরেকেটে তিন কিলোমিটার, সেখানে বিমানটি অত বেশি গতিতে কেন অবতরণ করছিল, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পাইলট যখন জানিয়েছিলেন পেটের উপর ভর দিয়ে বিমানটিকে মাটি ছোঁয়াবেন তিনি, সেই সময় রানওয়েতে উদ্ধারকারীদল, দমকল কেন হাজির ছিল না, উঠছে সেই প্রশ্নও। জরুরি পরিস্থিতিতে পেটে ভর দিয়ে যদি বিমান নামাতেও হয়, সেক্ষেত্রে গতিবেগ কমাতে আগে গোল করে চক্কর কাটা নিয়ম। সেই সময়ে আরও ভাবনাচিন্তার অবকাশও মেলে। এক্ষেত্রে কেন তা করা হল না, জবাব মেনেনি প্রশ্নের।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় দমকল বিভাগের প্রধান লি জিয়ং-হুন জানিয়েছেন, আবহাওয়া এমনিতেই খারাপ ছিল। তার উপর পাখিদের সঙ্গে সংঘর্ষে ল্যান্ডিং গিয়ারটি কাজ করছিল না। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দুর্ঘটনার কার্যকারণ খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই রিপোর্ট এলেই আসল কারণ জানা যাবে বলে মত তাঁর।
স্বল্প খরচে যাত্রী পরিবহণের জন্যই পরিচিত Jeju Air. দুর্ঘটনার পর দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চায় তারা। নিহতদের পরিবার-পরিজনদের এবং তদন্তে সর্বতো ভাবে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে। দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট চয় সাং-মোক জানিয়েছেন, কোনও সমবেদনা, আশ্বাসই যথেষ্ট নয়। সরকার বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে কাজ করেছ। নিহতদের পরিবারের পাশে থাকতে দায়বদ্ধ তাঁরা।