নয়াদিল্লি: চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের আবহে আচমকা লে সফরে সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করে শুক্রবার যখন তাঁদের মনোবল চাঙ্গা করতে উদ্দীপ্ত ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তখন ফের তাঁকে কটাক্ষ করলেন রাহুল গাঁধী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরাসরি নাম না করেই নিশানা করেন চিনকে, ভারতীয় জওয়ানদের দেশরক্ষায় অবদানের কথা স্মরণ করেন।
রাহুল লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চিনা বাহিনীর অনুপ্রবেশ, ভারতীয় ভূখণ্ড দখল নিয়ে ট্যুইট করেন, লাদাখিরা বলছেন, চিনারা তাঁদের জমি নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কেউ আমাদের জমি নেয়নি। তাহলে হয় লাদাখিরা বা প্রধানমন্ত্রী, কেউ একজন মিথ্যা বলছেন! রাহুলের ট্যুইটে বলা হয়েছে, লাদাখিরা বলছে, চিন আমাদের জমি কেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কেউ আমাদের জমি নেয়নি। তাহলে এটা পরিষ্কার, কোনও এক পক্ষ মিথ্যা বলছেন! রাহুল একটি ভিডিও-ও শেয়ার করেছেন যাতে কয়েকজন লাদাখিকে অভিযোগ করতে শোনা যাচ্ছে যে, লাদাখে চিনারা ভারতীয় ভূখন্ড কব্জা করেছে।

পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ও ভারতীয় সেনা জওয়ানদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এক কর্নেল সহ ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর জেরে দেশব্যাপী চিন-বিরোধী মনোভাব ছড়িয়েছে। চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। সরকার টিকটক সহ ৫৯টি চিনা মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। তার মধ্যেই আজ আকস্মিক সফরে লে-লাদাখ যান মোদি। লে-র নিমুতে সামনের সারির সেনা চৌকিতে গিয়ে সেনা, বায়ুসেনা ও ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের লোকজনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনাকেল বিপিন রাওয়াতকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ লে-তে পৌঁছলে শীর্ষ সেনা অফিসাররা তাঁকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত ও দুদেশের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের পর দেশবাসীর উদ্দেশে সম্প্রচারিত ভাষণে সরাসরি চিনের কথা না বলে দেশের একখণ্ড জমিও হাতছাড়া হয়নি বলে ঘোষণা করার পর চিনের কাছে নত হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড তুলে দেওয়া ও সীমান্ত সংঘাত নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি ।

আজ পূর্ব লাদাখে সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতে অনুপ্রবেশের ব্যাপারে ‘সোজাসুজি, খোলাখুলি’ চিনের নিন্দা না করায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছে কংগ্রেসও । কখন তিনি চিনকে স্পষ্ট দায়ী করবেন, জানতে চেয়েছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী আজ ‘সম্প্রসারণের যুগের অবসান হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে পরোক্ষে চিনকে ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু এতে খুশি নয় বিরোধী দল। কংগ্রেস বলেছে, চিন পাঙ্গং সো লেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৮ কিমি ভিতরে ঢুকেছে, গালওয়ান উপত্যকায় ৪২৩ কিমি ভিতরে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী পাল্টা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? পাশাপাশি শতাব্দীপ্রাচীন দলটি সীমান্ত সংঘাতের ইস্যুতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবিও তুলেছে। বলেছে, ইতিহাস প্রমাণ করেছে, প্রতিটি সরকার ভারতীয় সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী যদি ভেবে থাকেন,তিনি আমাদের দেশের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ঊর্ধ্বে, তবে তা ঠিক নয়।


প্রধানমন্ত্রী জওয়ানদের প্রশংসা করে বলেন, তাঁরা যে সাহস, দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন, তা বিশ্বের কারও চেয়ে কম নয়। আপনারা যে জায়গায় আছেন, সেখানে আপনাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না দুনিয়ার কেউ। আপনারা যেখানে আজ মোতায়েন রয়েছেন, তার চেয়েও উচ্চতায় বড় আপনাদের সাহস।