কলকাতা: পড়শি চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বারবার টানাপড়েন চলে ভারতের। ডোকলাম-সহ আরও একাধিক এলাকায় বারবার চিনা (India-China Clash) আগ্রাসনে ছবি দেখেছে ভারত, ঠেকিয়েওছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা, মূলত অরুণাচল প্রদেশের (Arunachal Pradesh) উপর চিনের দাবি নিয়ে চাপানউতোরও চলে। এই পরিস্থিতিতে কৌশলগত ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ ভারতের। ৯ মার্চ অরুণাচল প্রদেশে নরেন্দ্র মোদি (PM Modi inaugurates Sela Tunnel) উদ্বোধন করেছেন সেলা টানেলের। অসমের তেজপুর (Tezpur) থেকে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং (Tawang) যে রাস্তায় জুড়ছে সেই রাস্তার উপরেই অরুণাচলের পশ্চিম কামেং জেলায় রয়েছে এই টানেল। ১৩ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় তৈরি এই টানেল উত্তরপূর্ব ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দেশের প্রতিরক্ষার (Indian Defence Strategy) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত-চিন সীমান্ত LAC-এর কাছে একাধিক এলাকায় থাকা ফরোয়ার্ড পোস্ট ও তাওয়াং এলাকায় যোগাযোগের জন্য় এই টানেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার সঙ্গেই একটি রেকর্ডও তৈরি করেছেন সেলা টানেল (Sela Tunnel)। এখন এটি দেশের সর্বোচ্চ অল ওয়েদার টানেল (All weather Tunnel)। অর্থাৎ যে কোনও সময় যে কোনওরকম আবহাওয়া পরিস্থিতিতে কর্মক্ষম থাকবে এই টানেল।
এই টানেলের কারণে তেজপুর থেকে তাওয়াং যাওয়ার জন্য আরও ঘণ্টাখানেক সময় কম লাগবে। ১৩৭০০ ফুট উচ্চতায় দুর্গম সেলা টপ (Sela Top) পর্যটকরা এড়িয়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একাধিক রেকর্ড তৈরি করেছে Sela Tunnel. ১৩০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় তৈরি এই টানেল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ দ্বি-লেন টানেল (world’s longest twin-lane tunnel)। এতে ২টি টানেল রয়েছে, প্রথমটি ৯৮০ মিটার দীর্ঘ এক টিউবে টানেল (Single Tube Tunnel)। আরেকটি হল ১৫৫৫ মিটার লম্বা টুইন টিউব টানেল। এতে একটি যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে, অন্য একটি রাস্তায় রয়েছে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য। এর সঙ্গেই ৭ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোড রয়েছে। তাছাড়া ২টি টানেলের মধ্যে সংযোগের জন্য় একটি ১ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা লিঙ্ক রোড রয়েছে।
২০১৯ সালে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। সীমান্ত সুরক্ষা ক্ষেত্রে অরুণাচল প্রদেশ অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। গাড়ি চলাচলের যোগ্য পথ (motorable roads) এবং রেল যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে চিনের আগ্রাসন ঠেকাতে বারবার সমস্যায় পড়তে হয়েছে ভারতকে। কারণ তুলনায় চিনের দিকে সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই এগিয়ে। চিনের তরফে চটজলদি সীমান্তে পৌঁছনোর জন্য বহু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যা কৌশলতগতভাবে ভারতে চাপে ফেলেছে। সেই দিকে তাকিয়েই উত্তর-পূর্ব ভারতে (North East India) যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। একাধিক নতুন রাস্তা, নতুন বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে। তারই মধ্যে অন্যতম এই সেলা টানেল। এখন শীতের বেশ কয়েকমাস সেলা পাস (Sela Pass) বন্ধ থাকে। কিন্তু এই টানেলের ফলে এখন থেকে সারা বছর LAC-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন সেনা।